মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ডে গৃহকর্মী আয়েশা গ্রেফতার

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ডে গৃহকর্মী আয়েশা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যা করার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গৃহকর্মী আয়েশাকে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। বুধবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, প্রযুক্তিগত তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আয়েশার অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি চলছে।

মোহাম্মদপুরের একটি আবাসিক ভবনে সোমবার দুপুরে লায়লা আফরোজ (৪৮) এবং তার মেয়ে নাফিজা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা একই বাসায় থাকতেন এবং সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন আয়েশা। হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় শুরু থেকেই সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে পুলিশ এবং নিহতদের পরিবার।

ঘটনার দিন সকাল ৭টা ৫২ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কালো বোরকা পরিহিত অবস্থায় বাসায় প্রবেশ করছেন আয়েশা। একই দিন সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে আবার তাকে বের হতে দেখা যায়। তবে বের হওয়ার সময় তার গায়ে ছিল স্কুল ড্রেস, যা তদন্তকারীদের মতে হত্যাকাণ্ডের পর আত্মগোপনে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে পোশাক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। ফুটেজ পর্যালোচনার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে আয়েশা বাসার ভেতরেই ছিলেন।

নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম জানান, তিনি সে দিন সকাল ১১টার পরে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পান। ঘরে প্রবেশ করেই রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে তিনি পুলিশে খবর দেন। তিনি আরও জানান, বাসার মেঝে, দেয়াল এবং আসবাবের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ ছিল, যা হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতার ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিকভাবে পরিবারের ধারণা ছিল, গৃহকর্মী আয়েশাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, কারণ ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ এবং ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা। বাসার ভেতর থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা অভ্যন্তরীণ কারো সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ফরেনসিক বিশ্লেষণ চলছে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, নিহত নাফিজা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন এবং মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পড়তেন। সোমবার ছিল তার বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন। সকালে পরীক্ষায় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল বলে তারা ধারণা করেন। এমন পরিস্থিতিতে মা ও মেয়েকে হত্যা করা একটি পরিকল্পিত ঘটনা হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, লায়লা আফরোজ পরিবারের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন এবং কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না। তারা ঘটনার দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তদন্ত সংস্থা জানায়, হত্যার উদ্দেশ্য, घटना ঘটানোর সময় কী ঘটেছিল এবং কোনো সহযোগী ছিল কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আয়েশাকে গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হবে এবং ঘটনার সময়সূচি, পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সিসিটিভি, ফরেনসিক পরীক্ষা, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং জিজ্ঞাসাবাদ মিলিয়ে ঘটনার পূর্ণ চিত্র উদঘাটন সম্ভব হবে।

এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাজধানীতে আবারও গৃহকর্মী নিয়োগ ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও যাচাই-বাছাই নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পারিবারিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহকর্মীর পরিচয় যাচাই, নিবন্ধন এবং বাসায় প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

পুলিশ বলেছে, মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ে ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করা হবে।

আইন আদালত রাজধানী শীর্ষ সংবাদ