অর্থনীতি ডেস্ক
ডিসেম্বরের প্রথম আট দিনে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে এসেছে ১০০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গড়ে প্রতিদিন ১২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে এই প্রবাহ আরও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম আট দিনে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে দেশে এসেছিল ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। চলতি বছর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ৮ ডিসেম্বর এক দিনে দেশে এসেছে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স, যা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক গড় প্রবাহের তুলনায় বেশি। জুলাই থেকে ডিসেম্বরের প্রথম আট দিন পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি, যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বহির্বিশ্বে কর্মরত বাংলাদেশিদের আয়ের প্রবাহ শক্তিশালী থাকার প্রতিফলন।
রেমিট্যান্সের মাসওয়ারি প্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে এসেছে সর্বোচ্চ ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর আগের মাস অক্টোবরেও প্রবাহ শক্তিশালী ছিল, যেখানে এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে।
অন্যদিকে, আগস্ট ও জুলাই মাসে যথাক্রমে দেশে এসেছে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার এবং ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ধারাবাহিক মাসগুলোর এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতের স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি প্রবণতাকে স্পষ্ট করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ বাড়ানো, নীতিগত সহায়তার ধারাবাহিকতা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ এই প্রবাহ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বাৎসরিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মোট ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স গ্রহণের রেকর্ড। রেমিট্যান্স আয়ের এই অর্জন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়নে, বাড়তি রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে এবং আমদানি ব্যয় বহনে প্রয়োজনীয় মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগব্যয় বৃদ্ধি, পারিবারিক সঞ্চয় সক্ষমতা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতেও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে সরকারি প্রণোদনা নীতির অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। নির্ধারিত হারে প্রণোদনা এবং অর্থ পাঠানোর আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহমূলক নীতি প্রবাসীদের অধিক হারে অর্থ পাঠাতে অনুপ্রাণিত করছে। গত কয়েক বছর ধরে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এই বৃদ্ধির প্রবণতা সেই নীতির কার্যকারিতা নির্দেশ করে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করে চলেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান ও বিদেশে কর্মী রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধিও আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি করছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান প্রবাহ অব্যাহত থাকলে চলতি মাস ও অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স গ্রহণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।


