খেলাধুলা ডেস্ক
ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সেরা খেলোয়াড়ের (এমভিপি) পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এমএলএস ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পরপর দুই মৌসুমে এই সম্মান জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়লেন। ৩৮ বছর বয়সে এসে এমন অর্জন মেসির দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা ও উচ্চমানকে আবারও স্পষ্ট করেছে।
মৌসুমজুড়ে ইন্টার মায়ামির আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি এবং লিগে সর্বোচ্চ ২৯ গোল ও ১৯ অ্যাসিস্ট করে নিজেকে সেরা পারফরমার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। গোলসংখ্যার দিক থেকে এটি এমএলএস-এর ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই পারফরম্যান্স দলকে শিরোপা জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে মৌসুমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তার গোল ও সৃষ্ট সুযোগগুলো ম্যাচের ফল নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে।
পুরস্কার প্রাপ্তির পর মেসি তার সতীর্থদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে দলের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এমন অর্জন সম্ভব হতো না। পেশাদার ফুটবলে দলগত সাফল্যের গুরুত্ব দীর্ঘদিন ধরে তুলে ধরে আসা মেসি এবারও একই বার্তা পুনর্ব্যক্ত করেন। এই মন্তব্য এমএলএস-এ তার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে, কারণ এটি তার নেতৃত্বগুণ ও দলীয় খেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতাকেও প্রতিফলিত করে।
এর আগে এমএলএস-এ টানা দুই মৌসুমে এমভিপি জয়ের নজির ছিল না। দুইবার পুরস্কার জয়ের রেকর্ড ছিল শুধুমাত্র প্রেকির, যিনি ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে এই সম্মান অর্জন করেছিলেন। মেসির টানা দুই মৌসুমে এই পুরস্কার জয় তাই এমএলএস-এর নতুন ইতিহাস এবং লিগের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে তার অসাধারণ মান বজায় রাখার উদাহরণ।
মেসির এমএলএস যাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালে, পিএসজি থেকে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। প্রথম মৌসুমেই তিনি দলকে লিগস কাপ শিরোপা এনে দেন, যা দলের ইতিহাসে প্রথম বড় সাফল্য। নতুন লিগে যোগ দেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই দলের খেলার ধরণ বদলে দিতে সক্ষম হন তিনি। তার নেতৃত্বে দলের আক্রমণভাগ আরও সংগঠিত হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী মৌসুমগুলোতে ইন্টার মায়ামির ফলাফলে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
২০২৪ মৌসুমেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। সে বছরের ১৯ ম্যাচে মেসি ২০ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট করে এমভিপি জয় করেন। দুই মৌসুম ধরে এমন উচ্চপর্যায়ের পারফরম্যান্স তুলে ধরা একজন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে বিরল, যা লিগের সামগ্রিক মান উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। মেসির উপস্থিতিতে এমএলএস বিশ্বব্যাপী আরও বেশি নজর কাড়তে শুরু করে এবং লিগের বাণিজ্যিক মূল্য ও দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ইন্টার মায়ামির সাম্প্রতিক সাফল্যেও তার অবদান অপরিসীম। তার নেতৃত্বে দল ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে সাপোর্টার্স শিল্ড জেতে, যা এমএলএস-এর নিয়মিত মৌসুমে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দলের স্বীকৃতি। দলের আক্রমণভাগে ধারাবাহিক সুযোগ সৃষ্টি ও রক্ষণভাগে চাপ কমাতে তার ভূমিকা মৌসুমের প্রতিটি ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলীয় খেলায় তার প্রভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ম্যাচের ফলাফলে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকেও আলাদা পরিকল্পনা করতে হয়েছে।
এমএলএস-এ মেসির অবদান শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়। লিগে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ানো, তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল বাজারকে আরও উজ্জীবিত করতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ইউরোপীয় ও দক্ষিণ আমেরিকান লিগের তারকা খেলোয়াড়দের জন্য এমএলএস এখন আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তৈরি হয়েছে, যার পেছনে মেসির উপস্থিতি বড় ভূমিকা পালন করছে।
টানা দ্বিতীয় এমভিপি জয়ের মাধ্যমে মেসি প্রমাণ করলেন যে বয়স তার পারফরম্যান্সে কোনো বাধা সৃষ্টি করছে না। বরং অভিজ্ঞতা, খেলার পড়া এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার সমন্বয়ে তিনি এখনও বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা পারফরমার। এমএলএস-এ তার ধারাবাহিক আধিপত্য ভবিষ্যতেও লিগের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং ইন্টার মায়ামির সামনে আরও নতুন সাফল্যের সুযোগ তৈরি করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মেসির এই অর্জন এমএলএস-এর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করল এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ধারাবাহিক সাফল্যের তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।


