জাতীয় ডেস্ক
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নন–ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতা সংক্রান্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর আড়াইটার পর থেকে তারা সচিবালয়ের ১১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় অর্থ উপদেষ্টার কক্ষে প্রবেশপথ ঘিরে অবস্থান নিতে শুরু করেন এবং দাবি আদায়ে স্লোগান দিতে থাকেন। ঘটনার কারণে সংশ্লিষ্ট ভবনে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সচিবালয়ের বিভিন্ন দফতরের নন–ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৃথকভাবে জড়ো হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মূল গেটের সামনেও অবস্থান নেন। তারা হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে ভাতা প্রদানের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং অবিলম্বে সরকারি আদেশ জারি করার দাবি জানান। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, বহু বছর ধরে ভাতা ও রেশন সুবিধা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কর্মচারীদের এমন সমবেত অবস্থানের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাদের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, বারবার আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে বলেন, ভাতা সংক্রান্ত সরকারি আদেশের বিষয়ে আজ কোনো সিদ্ধান্ত না হলে সচিবালয় ত্যাগ করতে দেওয়া হবে না ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাদের দাবি, সমস্যার সমাধান না হলে নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়েও কেউ বের হতে পারবেন না।
কর্মচারীরা জানান, এর আগেও রেশন সুবিধা চালুর দাবিতে তারা অনুরূপভাবে অর্থ উপদেষ্টাকে দপ্তরে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করেছিলেন। তখন বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হলেও তাদের বক্তব্য অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ঘোষিত মহার্ঘ্য ভাতা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। পাশাপাশি নতুন পে-কমিশন গঠন করা হলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় নন–ক্যাডার কর্মচারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভ বাড়ছে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, ফলে নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি কর্মীদের ভাতা কাঠামো হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে ভাতার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় কর্মচারীরা প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে সমস্যায় পড়ছেন। এ অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত না আসলে তাদের আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবিরের নেতৃত্বে কর্মচারীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি দাবি জানান, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে। তার মতে, এই কাঠামো নির্ধারণে বিলম্বের কারণে বিভিন্ন দফতরের কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ জমে উঠেছে, যা আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বিকেল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সমাধান বা সিদ্ধান্তের ঘোষণা পাওয়া যায়নি। সচিবালয়ে কর্মচারীদের অবস্থান এবং উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিষয়টি সমাধান না হলে সচিবালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যা সরকারি কাজের গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বিশ্লেষণধর্মী সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভাতা কাঠামো ও পে-কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও বাজেট কাঠামো, আর্থিক সক্ষমতা এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা স্থগিত হয়ে থাকে। কর্মচারীদের দাবির প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আলোচনায় বসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আন্দোলনকারীরা আজই সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না এলে কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দিনব্যাপী বিক্ষোভের কারণে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ভবনে সাধারণ অফিস কার্যক্রম সীমিত আকারে চললেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সময় ব্যয় করেন। প্রশাসনিক ভবনগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিকেল পর্যন্ত কার্যকর সমাধান না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
দিন শেষে ভাতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা না হলে আন্দোলনকারীরা রাত পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন। পরিস্থিতির পরবর্তী ধাপ নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অর্থ উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের ওপর।


