সরকারের অনুমোদনে যুক্তরাজ্য থেকে এলএনজি ক্রয়, হাওর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পেও অগ্রগতি

সরকারের অনুমোদনে যুক্তরাজ্য থেকে এলএনজি ক্রয়, হাওর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পেও অগ্রগতি

অর্থনীতি ডেস্ক

ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং আসন্ন শীত মৌসুমে গ্যাস সরবরাহে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যুক্তরাজ্য থেকে একটি কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৯তম সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জ্বালানি বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা যুক্তরাজ্যের টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে এ এলএনজি আমদানি করবে। নির্ধারিত হিসাবে প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৩৭ মার্কিন ডলার দরে কার্গোটি ক্রয় করা হবে। এ লেনদেনে মোট ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শীতকালীন সময়ে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এ ক্রয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে গৃহস্থালি, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন—সব খাতে জ্বালানি সরবরাহে কোনো ঘাটতি না দেখা দেয়।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানির চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে গ্যাস ব্যবহার তুলনামূলক বেশি থাকে, ফলে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানার কার্যক্রম এবং নগরায়ণের সম্প্রসারণের ফলে জাতীয় গ্যাসগ্রিডে চাপও ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি ক্রয় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সময়মতো প্রয়োজনীয় এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের ঘাটতি হ্রাস এবং জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব।

এলএনজি আমদানির খরচ আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামার ওপর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন সময় মূল্য পরিবর্তন হলেও সরকার সামগ্রিক চাহিদা পূরণ এবং শিল্পায়ন অব্যাহত রাখতে আমদানির পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে পেট্রোবাংলা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও নিয়মিত মূল্য পর্যালোচনা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে বলে তাদের ধারণা।

অন্যদিকে, একই সভায় হাওরাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্মাণ প্যাকেজ অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। ‘হাওর এলাকায় ফ্লাইওভার সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অংশ হিসেবে অনুমোদিত প্যাকেজ (সুনা/ধর্মপাশা/সিডব্লিউ-৬) বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় এ নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হবে। সংশ্লিষ্ট মূল্যায়নে এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে যোগ্য দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে।

হাওরাঞ্চলে পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে ভৌগোলিক প্রতিকূলতার কারণে পিছিয়ে রয়েছে। মৌসুমি বন্যা, পানির উচ্চতা এবং দুর্যোগপ্রবণ পরিবেশের কারণে স্থানীয় মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন জটিল হয়ে পড়ে। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এসব অঞ্চলের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়বে বলে কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত চলাচল আরও সহজ হবে। উন্নত সড়ক ও অবকাঠামো গড়ে উঠলে স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং মৌসুমি দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের জীবনমানের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠলে কৃষি উৎপাদন বাজারজাতকরণ সহজ হবে, ফলে স্থানীয় কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি জরুরি সেবা—বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা—হাতে পৌঁছানোর সময় কমে আসবে। হাওর অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য; অবকাঠামো উন্নয়ন এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করতে পারে।

সার্বিকভাবে, এ দুটি অনুমোদন দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের চলমান অগ্রাধিকারকে প্রতিফলিত করে। শীতকালীন জ্বালানি চাহিদা পূরণে এলএনজি ক্রয় উদ্যোগ যেমন প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করবে, তেমনি হাওরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় জনগণের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ