ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নে জনমত সংগ্রহ করবে জামায়াতে ইসলামী

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নে জনমত সংগ্রহ করবে জামায়াতে ইসলামী

রাজনীতি ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় ইশতেহার প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান তাঁর যাচাইকৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে জানান যে, ইশতেহার তৈরির জন্য অনলাইনভিত্তিক একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের মতামত, প্রস্তাবনা ও প্রত্যাশা জানাতে পারবেন। ‘জনতার ইশতেহার’ নামের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দলটি নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় গণমানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নীতি, পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে প্রতিটি দলের মতোই জামায়াতে ইসলামীও তাদের ইশতেহার প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এবার দলটি ইশতেহার প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অনলাইনভিত্তিক পরামর্শ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের অগ্রাধিকার, সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলোকে নীতিপত্রে প্রতিফলিত করা এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পরিসর সম্প্রসারণ।

ডা. শফিকুর রহমান তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন যে, একটি দেশের নীতি-নির্ধারণে জনগণের মতামতই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লেখেন, “আপনার একটি সুন্দর পরামর্শ বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের আগামী।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দলটি যে ইশতেহার প্রণয়ন করবে, তা গণমানুষের মতামতের ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে এবং প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে এই প্রক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণ, নারী, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মতামত অন্তর্ভুক্ত হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার প্রণয়নে সার্বিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রবণতা বেড়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে অনলাইনভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণ সহজ হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মতামত সংগ্রহে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে নাগরিক অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিষয়ে জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও চাহিদার প্রতিফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ইশতেহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের পূর্বে তাদের নীতি, লক্ষ্য, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতিগুলো স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরে। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবাধিকার, সুশাসন, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্থান পায়। সেই প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মতামত সংগ্রহের উদ্যোগটি দলীয় নীতিপত্রকে আরও সমৃদ্ধ ও বাস্তবসম্মত করতে সহায়তা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ‘জনতার ইশতেহার’ প্ল্যাটফর্মে নাগরিকরা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুপারিশ পাঠাতে পারবেন। শিক্ষা খাতে মান উন্নয়ন, শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, উচ্চশিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ, স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকীকরণ, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা, নারী-শিশুর সুরক্ষা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা এবং নগর ব্যবস্থাপনা–এসব বিষয়ক প্রস্তাব গ্রহণের সম্ভাবনাও রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে প্রাপ্ত সব মতামত আলাদা টাস্কফোর্স ও বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।

এ ধরনের উদ্যোগ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনমুখিতা ও জবাবদিহিতার প্রবণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করলে দলীয় নীতিপত্র বাস্তবতার সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং নির্বাচনোত্তর নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। একই সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক পরামর্শগ্রহণ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক যোগাযোগকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে, যা তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

জামায়াতে ইসলামী এখনো ঘোষণা করেনি যে প্ল্যাটফর্মটি কবে নাগাদ চালু হবে বা কতদিন পর্যন্ত জনমত গ্রহণ করা হবে। তবে দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা ধারণা দিচ্ছেন যে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে। এ উদ্যোগ সফল হলে ইশতেহার প্রণয়নে grassroots স্তরের মতামত অন্তর্ভুক্ত হওয়ার একটি নতুন ধারা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দল ইতোমধ্যে তাদের নীতিগত প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে জনগণের মতামতকে কেন্দ্র করে ইশতেহার তৈরির এই উদ্যোগ দেশের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ