ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির মতবিনিময়

ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে নির্বাচন-পূর্ব সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় করেছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, ভোটার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

বৈঠকে এনসিপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া এবং যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা অংশ নেন এবং তারা বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হওয়ার প্রত্যাশার বিষয়টি তুলে ধরেন।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা এবং নির্বাচনী পরিবেশের ওপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আগ্রহ এ ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আলোচনা সূত্রে জানা যায়, এনসিপি প্রতিনিধিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রচার-প্রচারণার সুযোগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং ভোটারদের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতির নানা দিক ব্যাখ্যা করেন এবং মাঠের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে কূটনীতিকদের অবহিত করেন।

ইইউ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা, নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সংলাপের গুরুত্ব নিয়ে মতামত তুলে ধরে। তারা আগের নির্বাচনগুলোতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার গুরুত্ব উল্লেখ করেন। বৈঠকে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতরা জোর দেন যে নির্বাচনের আগে সকল পক্ষের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা বজায় রাখা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।

এনসিপি প্রতিনিধিরা কূটনীতিকদের বলেন যে তারা গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তারা আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ এবং প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধাহীন কার্যক্রম নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে ভূমিকা রাখে।

চলমান নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক তৎপরতার গুরুত্ব বাড়ছে, কারণ জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ভোটের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনাও তত গভীর হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের এই ধরনের ধারাবাহিক বৈঠক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহকে তুলে ধরে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি বৈশ্বিক প্রত্যাশাও স্পষ্ট করে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকরা বৈঠকে জানান, একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করে নির্বাচনী পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে সহযোগিতা করবে।

বৈঠকের অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, স্বচ্ছ ভোটিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হলে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তারা মানবাধিকার সুরক্ষা, রাজনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা এবং ভোটারদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও ভোট প্রদানে সহায়ক পরিবেশ তৈরির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।

এই মতবিনিময় সভা বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ও আগ্রহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কূটনীতিকদের এ ধরনের বৈঠক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ