গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশে চলমান সংস্কারকে গুরুত্ব দিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশে চলমান সংস্কারকে গুরুত্ব দিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ এবং আইনি কাঠামোর উন্নয়নে চলমান সংস্কার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বৈঠক শেষে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব পাওয়া সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল জরুরি কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করা। এসব সংস্কারের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বাড়ানো, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং আইনগত কাঠামো আধুনিকায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তার মতে, এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে, যদিও চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে এসব আইন ও নীতির বাস্তব প্রয়োগের ওপর।

সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারের পাঁচ বছরের দায়িত্ব থাকে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, তাই এক বছরের মধ্যে সমস্ত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্পন্ন হওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদে যেসব সংস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনি কাঠামো সংশোধন এবং গণতান্ত্রিক চর্চার ভিত্তি দৃঢ় করার মতো কাজগুলো সম্পন্ন করাই বর্তমান সরকারের প্রধান ম্যান্ডেট ছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কারের সফলতা মূলত নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারের ওপর, যারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এসব সংস্কারের বাস্তব প্রয়োগ কতটা বাধাহীনভাবে এগোবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে—তা মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হবে। তার মতে, আইন ও নীতি সংস্কার কেবল প্রথম ধাপ; কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এগুলোর প্রভাব জনগণের কাছে পৌঁছাবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দৃঢ়তা নিশ্চিত করতে যেসব সংশোধন করা হয়েছে, তাদের চর্চা শুরু হওয়াই এখন মূল বিষয়। তিনি বলেন, আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা হলেও তার প্রয়োগ ততটাই জরুরি, কারণ প্রয়োগের কার্যকারিতা থেকেই বোঝা যাবে সংস্কার কতটা সফল।

ভবিষ্যতের সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসন্ন রাজনৈতিক সরকারকে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সেই গণভোটের ওপর নির্ভর করবে সংস্কারের পরবর্তী ধাপ কীভাবে এগোবে। তিনি জানান, সংস্কারের যে অংশগুলোকে তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হয়েছিল, সেগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন এর বাস্তব প্রয়োগের ওপর ভিত্তি করে সামগ্রিক অগ্রগতি মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি নীতিমালা, পরিবেশ–সংক্রান্ত আইন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় জোরদার করার বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, চলমান সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিবেশ ও জলবায়ু–সংক্রান্ত আইনগুলোর হালনাগাদ, পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম শক্তিশালী করা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত বিধিমালা বাস্তবায়নে তদারকি জোরদারের বিষয়ও আলোচনায় ছিল। উপদেষ্টা জানান, এসব পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তন আনার জন্য আইনি সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক অনুশীলনগুলোকেও আধুনিকায়ন করতে হবে। ভবিষ্যতের সরকার এসব পরিবর্তন কতটা গভীরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তার ওপরই নির্ভর করবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শেষ পর্যন্ত জানান, সংস্কারের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করা হলেও এখন নজর দিতে হবে তার কার্যকর বাস্তবায়নের দিকে। নীতি ও আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করা সম্ভব হলেও টেকসই অগ্রগতির জন্য আগামী সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি অপরিহার্য।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ