নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা-১১, ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৯সহ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আরও কয়েকটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর সকালে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রথম ধাপের ১২৫টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন। দলীয় নীতিমালা অনুসারে তালিকা প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে সব আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা-১১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মো. নাহিদ ইসলাম এবং ঢাকা-১৮ আসনে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ডা. তাসনিম জারা। ঘোষিত তিনজনই ‘শাপলা কলি’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রার্থীদের যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, প্রাথমিক তালিকায় থাকা প্রার্থীদের বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় বা নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের আশঙ্কা দেখা দেয়, তবে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দল নির্বাচনসংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন যথাযথভাবে মানতে বদ্ধপরিকর, এবং মনোনীত প্রত্যেক প্রার্থীকে সেসব নীতিমালা অনুসরণ করতেই হবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা জানান, দল প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তি এবং তৃণমূলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে। তার মতে, প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনের সব নির্দেশনা মেনে গণভোটে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং দলীয়ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দল যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে তারা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, দল এমন কাউকে সমর্থন দেয় না যিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বা কোনো ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িত থাকতে পারেন। যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনের নিয়ম ভঙ্গ করেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, ঢাকা বিভাগসহ বিভিন্ন জেলার যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা অনুযায়ী—টাংগাইল, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরের একাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাংগাইল-১ আসনে সাইদুল ইসলাম, টাংগাইল-৩ আসনে সাইফুল্লাহ হায়দার এবং টাংগাইল-৫ আসনে মাসুদুর রহমান রাসেলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে আলী নেওয়াজ ও মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে মাজেদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঢাকার অন্যান্য আসনের মধ্যে ঢাকা-১ এ মো. রাসেল আহমেদ, ঢাকা-৪ এ ডা. জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা-৫ এ এস এম শাহরিয়ার, ঢাকা-৭ এ তারেক আহম্মেদ আদেল, ঢাকা-১২ এ নাহিদা সারওয়ার নিভা, ঢাকা-১৩ এ আকরাম হুসাইন, ঢাকা-১৫ এ মেজর (অব.) মুহাম্মদ আলমগীর ফেরদৌস, ঢাকা-১৬ এ আরিফুল ইসলাম আদীব, ঢাকা-১৭ এ ডা. তাজনূভা জাবীন, ঢাকা-১৯ এ ফয়সাল মাহমুদ শান্ত এবং ঢাকা-২০ আসনে ইঞ্জিনিয়ার নাবিলা তাসনিদ প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন।
গাজীপুর-৬ আসনে ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, নরসিংদী-১ এ মো. আবদুল্লাহ আল ফয়সল, নরসিংদী-২ এ সারোয়ার তুষার, নরসিংদী-৪ এ মো. মামুনুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং নরসিংদী-৫ আসনে মো. নাজমুল হক সিকদার মনোনীত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ এ এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন ও নারায়ণগঞ্জ-৫ এ আহমেদুর রহমান তনু প্রার্থী হবেন।
রাজবাড়ী-২ আসনে সাইয়েদ জামিল, ফরিদপুর-৩ আসনে সৈয়দা নীলিমা দোলা, গোপালগঞ্জ-১ আসনে প্রলয় কুমার পাল, গোপালগঞ্জ-৩ এ মো. আরিফুল দাড়িয়া এবং শরীয়তপুর-১ আসনে মো. আব্দুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বাকি আসনের মনোনয়ন আরও দুই ধাপে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন সামনে আসায় দল মনোনয়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে চাইছে, যাতে প্রার্থীরা আইনানুগ প্রচারণা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেন। দল আশা করছে, প্রাথমিক পর্যায়ের এই তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনগত কার্যক্রম আরও জোরদার করতে পারবেন এবং নির্বাচনি বিধি মেনে প্রচারণা পরিচালনার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাবেন।


