জামালপুরে র‌্যাব কর্মকর্তার স্ত্রীর শ্বাসরোধে হত্যা, স্বর্ণালঙ্কার লুট

জামালপুরে র‌্যাব কর্মকর্তার স্ত্রীর শ্বাসরোধে হত্যা, স্বর্ণালঙ্কার লুট

 

জেলা প্রতিনিধি

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভায় ভাড়া বাসায় অবস্থানরত র‌্যাব কর্মকর্তার স্ত্রী লিপি আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘরে প্রবেশকারী চোরের হাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলা বাজার গৌরী শংকর (গণময়দান) মাঠ সংলগ্ন এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শেষে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লিপি আক্তার (৩৫) সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর এলাকার বাসিন্দা। তিনি র‌্যাব-২ এর উপপরিদর্শক (এসআই) মহর আলীর স্ত্রী। মহর আলী বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় কর্মরত থাকায় তার স্ত্রী ও কন্যা আলাদা বসবাস করছিলেন। কয়েক বছর আগে থেকে লিপি আক্তার মেয়েকে নিয়ে শিমলা বাজার এলাকার ওই ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। ঘটনার সময় বাসায় মা-মেয়েই ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বুধবার রাতের খাবার শেষে লিপি আক্তার তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে নিথি আক্তারকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে এক বা একাধিক চোর বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। চোর ঢোকার শব্দে বা নড়াচড়ায় লিপি আক্তারের ঘুম ভেঙে গেলে তিনি অপরাধীকে চিনে ফেলেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। এতে আতঙ্কিত হয়ে চোর প্রথমে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঘর থেকে স্বর্ণালঙ্কার লুট করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

ঘটনাকালে লিপি আক্তারের মেয়েকে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। শিশুটি ঘটনার সময় আতঙ্কিত অবস্থায় ছিল এবং পরে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে পুলিশ খবর পায়। সকালে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লিপি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাচ্ছু মিয়া জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি পূর্বপরিকল্পিত চুরি ও হত্যাকাণ্ড। চোর বাসার গ্রিল কেটে ঢুকেছে এবং ভুক্তভোগী অপরাধীকে চিনে ফেলায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে হত্যার ধরন ও বিস্তারিত আরও স্পষ্ট হবে। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে এবং চোর শনাক্তে তদন্ত চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিমলা বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি ভাড়া বাসায় পরিবারগুলো আলাদা বসবাস করে। এলাকায় পুলিশের নিয়মিত টহল থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে চুরি-ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই রাতের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরের প্রবেশপথ, সময় নির্বাচন ও হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে অপরাধী ভুক্তভোগীর বাসার অবস্থান, বাসায় কারা থাকে এবং তাদের দৈনন্দিন চলাফেরা সম্পর্কে পূর্ব ধারণা বা পর্যবেক্ষণ করেছিল। স্বর্ণালঙ্কার লুটের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্তকারীরা ধারণা করছেন এটি পেশাদার চক্রের কাজ হতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, লিপি আক্তারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এবং ঘটনার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা, পূর্ববিরোধ বা আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত কোনো সূত্র রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভাড়া বাড়ির মালিক, প্রতিবেশী এবং সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করা ব্যক্তিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ময়নাতদন্তের ফল এবং সিসিটিভি বিশ্লেষণ হাতে এলে তদন্ত আরও এগিয়ে যাবে বলে পুলিশ আশা করছে। হত্যাকাণ্ডের ধরন ও লুট হওয়া মালামালের মূল্য নির্ধারণ করতেও কাজ করছে তদন্ত দল।

এদিকে, র‌্যাব কর্মকর্তার পরিবারের ওপর সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসী দ্রুত ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং অপরাধীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে এবং শিগগিরই অগ্রগতি জানানো হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ