বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ, লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ, লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পোল্যান্ডে নিযুক্ত এবং লিথুয়ানিয়ায় অনাবাসিকভাবে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ময়নুল ইসলাম লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতি গিতানাস নাউসেদা-এর কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ভিলনিয়াসে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে আরও সুসংহত হলো।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাষ্ট্রদূতকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয়। পরে রাষ্ট্রদূত তার পরিচয়পত্র রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্দেশে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেন। পরিচয়পত্র গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি নাউসেদা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন, যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর ও বাস্তবসম্মত অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত ময়নুল ইসলাম বাংলাদেশ ও লিথুয়ানিয়ার সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তারের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু–সম্পর্কিত উদ্যোগে উভয় দেশের সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা দরকার, এবং এ বিষয়ে লিথুয়ানিয়ার সমর্থন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিচয়পত্র পেশের পূর্বে রাষ্ট্রদূত লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী টরিকাস ভ্যালিস, রাষ্ট্র ও কূটনৈতিক প্রোটোকল বিভাগের মহাপরিচালক জুরাতে লোশিয়েনে এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স অধিদপ্তরের সিনিয়র কাউন্সেলর ক্রিস্টিনা বাবিচিয়েনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ধারা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে এখনও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা অনাবিষ্কৃত রয়েছে বলে রাষ্ট্রদূত বৈঠকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে লিথুয়ানিয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক অংশীদার হতে পারে। জাহাজ নির্মাণ, ওষুধশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, হালকা প্রকৌশল ও পোশাক খাতে দু’দেশের যৌথ উদ্যোগ এবং রপ্তানিমুখী সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত লিথুয়ানিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্ভাবনার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের দক্ষ ও আধাদক্ষ মানবসম্পদ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানে সফলভাবে অবদান রাখছে, এবং লিথুয়ানিয়ায় এ ধরনের কর্মী প্রেরণের সুযোগও সম্প্রসারিত হতে পারে। এ জন্য দুই দেশের মধ্যে শ্রমবিষয়ক সমঝোতা স্মারক অথবা যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে।

এ ছাড়া উভয় দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ও উত্থাপিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে টেকসই প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সমাধানে সহযোগিতা পেতে আগ্রহী।

বৈঠকগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল লিথুয়ানিয়ার টিআরপি (টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট) ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা আবেদনকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে বাংলাদেশে ভিএফএস সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ভিএফএস সেন্টার স্থাপন হলে আবেদনকারীদের সময়, খরচ ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমবে এবং দুই দেশের মানুষের চলাচল আরও সহজ হবে।

লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই ভিএফএস সেন্টার স্থাপনের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেন। তারা জানান, প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

পরিচয়পত্র পেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। কূটনীতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকগুলোতে আলোচিত বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ও লিথুয়ানিয়ার সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে, বিশেষ করে বাণিজ্য, মানবসম্পদ বিনিময়, শিক্ষা ও কনস্যুলার সেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যাশা করা যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ