আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে আলজেরিয়া। ঢাকায় আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে দেশটির রাষ্ট্রদূত আব্দেলওয়াহাব সাইদানি এই ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আলজেরিয়া দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় রাষ্ট্রদূত সাইদানি বলেন, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও মুক্তির আন্দোলনে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে আত্মিক বন্ধন রয়েছে, তাকে আরও গভীর ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে। অনুষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলজেরিয়ার আগ্রহ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানটি ১৯৬০ সালের ১১ ডিসেম্বর আলজেরিয়ায় স্বাধীনতার দাবিতে গণবিক্ষোভে নিহত শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হয়। শুরুতে আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করা হয়। রাষ্ট্রদূত সাইদানি বলেন, ফরাসি শাসনামলে শার্ল দ্য গোলের প্রস্তাবিত সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাখ্যান করে আলজেরিয়ান জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে নামেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই গণ-আন্দোলন আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দেয় এবং জনগণের স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়।
রাষ্ট্রদূত জানান, ১১ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ আলজেরিয়ার জাতীয় ঐক্যকে সুসংহত করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আলজেরিয়ার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করে। জাতিসংঘ এই অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায় এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপের মুখে ফ্রান্স আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দেশটি স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয় এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জন করে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বর্তমান আলজেরিয়ার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং যুবশক্তির অংশগ্রহণের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উদ্ভাবন, শিক্ষা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আলজেরিয়ার সাম্প্রতিক সাফল্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের জন্য সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বাংলাদেশ ও আলজেরিয়া—উভয় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, দুই দেশই উন্নয়ন লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন এবং সবুজ জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে চায়, যা ভবিষ্যৎ সহযোগিতাকে আরও কার্যকর করতে পারে।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ১৯৬০ সালের গণবিক্ষোভের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ানদের প্রতিরোধ এবং সেই আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। প্রামাণ্যচিত্রে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধাদের স্মরণ করা হয় এবং আলজেরিয়ার জাতীয় পরিচয় ও রাষ্ট্রগঠনে তাদের অবদান উপস্থাপন করা হয়।
আলজেরিয়া দূতাবাস জানায়, কূটনৈতিক বিনিময়, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং শিক্ষাখাতে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আঞ্চলিক বাণিজ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।


