জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা তিন লাখ অতিক্রম করেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯২ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৩ জন পুরুষ এবং ২৩ হাজার ২১৯ জন নারী।
ইসির অনলাইন তথ্যভাণ্ডার থেকে জানা যায়, চলমান আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় ভোট প্রদানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রবাসীদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও ভোট দিতে পারবেন। ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে অ্যাপের মাধ্যমে পূর্বনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ইসি জানায়, গত ১৯ নভেম্বর অ্যাপে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা এতে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। নিবন্ধন ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো শুরু হয়েছে। ব্যালট পেয়ে ভোটার নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট প্রদান শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানায় ডাক বিভাগের মাধ্যমে তা ফেরত পাঠাবেন।
পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার আওতায় নিবন্ধন কার্যক্রম বর্তমানে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে চলছে। বতর্মানে নিবন্ধন চালু রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিশর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবসহ অসংখ্য দেশে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের জন্য ডাকভিত্তিক ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং লজিস্টিক প্রস্তুতি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস, কনস্যুলার অফিস ও অভ্যন্তরীণ ডাক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে। বিদেশে ব্যালট পাঠানো ও দেশে ফেরত আনা—উভয় প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকে ইসি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত প্রায় ৫০ লাখ সম্ভাব্য ভোটারকে এই ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এ কারণে নিবন্ধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
নতুন পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ডাকভিত্তিক ভোট প্রদানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি থাকায় এ উদ্যোগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এতে বিদেশে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক নাগরিক ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আরও সুসংগঠিতভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সে অনুযায়ী দেশীয় ও বিদেশি ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, ব্যালট প্রস্তুতি, প্রিন্টিং, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং লজিস্টিক সমন্বয়সহ বিভিন্ন দফার কার্যক্রম একযোগে চলছে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়লে এটি সামগ্রিক ভোটার উপস্থিতির হারকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত শ্রমিক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ বিস্তৃত হবে। এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদেশে ভোট প্রদানের কাঠামো সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধন অব্যাহত থাকায় মোট আবেদনকারীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হবে এবং কতজন প্রবাসী ভোট দেবেন তা পরবর্তীতে নির্ধারিত হবে।


