আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজের ক্ষেত্রে দ্রুত আবাসিক অনুমতি পাওয়ার সুযোগ দিতে নতুন ভিসা কর্মসূচি ‘ট্রাম্প গোল্ড কার্ড’ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। ৯ ডিসেম্বর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত ঘোষণার মাধ্যমে তিনি জানান, যাচাইকৃত ও যোগ্য আবেদনকারীদের জন্য এই কর্মসূচি গ্রিন কার্ডের মতো হলেও আরও অধিক সুবিধা দেবে এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকত্ব লাভের একটি কার্যকর পথ তৈরি করবে।
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তি আকর্ষণ করতে পারবে। পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী ধরে রাখার সুযোগ পাবে। প্রশাসনের হিসেবে, নতুন ভিসা কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে উচ্চযোগ্যতাসম্পন্ন অভিবাসীদের প্রবেশ সহজ করবে, যা উন্নত প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নতুন পোর্টাল ‘ট্রাম্পকার্ড ডটগভ’-এ অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের প্রসেসিং ফি জমা দিতে হবে। পরবর্তী নিরাপত্তা যাচাই সম্পন্ন হওয়ার পর এক মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদান করলে গোল্ড কার্ড ইস্যু করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত গ্রিন কার্ডের তুলনায় দ্রুত ও অধিক প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদানকারী একটি বিশেষ অভিবাসন ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এই কর্মসূচি যে শুধুমাত্র আবাসন সুবিধা দেবে তা নয়—যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ পরিচালনা এবং উচ্চ আয়ের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের সুযোগও বাড়াবে। আবাসিক অনুমতি পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি তুলনামূলক দ্রুত সমাধান বলে বিবেচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া সাধারণত জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় উচ্চমূল্যের এই কর্মসূচিকে একটি বিকল্প পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রাথমিক নিবন্ধন পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার মানুষ সাইন আপ করেছেন। তার প্রত্যাশা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কোষাগারে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব যোগ হবে এবং কর্মসূচিটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, গোল্ড কার্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ আয়ের আবেদনকারীদের প্রবেশ উৎসাহিত হবে, যার ফলে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়তে পারে।
তবে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে এখনও স্পষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ বিনিয়োগ নির্ভর ভিসা সাধারণত ধনী ও উদ্যোক্তা শ্রেণিকে আকৃষ্ট করে। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের প্রসার ঘটে, কিন্তু একই সঙ্গে আয়ের বৈষম্য ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্নও থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে অতীতে বিনিয়োগের বিনিময়ে ভিসা বা আবাসিক সুবিধা দেওয়ার বেশ কয়েকটি কর্মসূচি চালু ছিল, যার মধ্যে ইবি-৫ ভিসা অন্যতম। নতুন গোল্ড কার্ড কর্মসূচিকে অনেকেই তার সম্প্রসারিত ও উচ্চমূল্যের সংস্করণ বলে মনে করছেন।
নতুন ব্যবস্থায় করপোরেট সংস্করণও যুক্ত করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের কর্মীদের জন্য দ্রুত ভিসা নিশ্চিত করতে প্রতিজনের জন্য দুই মিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে পারবে। এর ফলে বড় কোম্পানিগুলো দক্ষ কর্মী নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত প্রযুক্তি কোম্পানি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাধর্মী সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে এই সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে আইনসম্মত ও অবৈধ উভয় ধরনের অভিবাসনে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছিল। তবে বর্তমান উদ্যোগটি রাজস্ব আদায় এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। কঠোর অভিবাসন নীতির মধ্যেও বিনিয়োগ ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সহজ করার এই পদক্ষেপ প্রশাসনের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বহুমাত্রিকতার ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, গোল্ড কার্ড কর্মসূচি ভবিষ্যতে অভিবাসন কাঠামোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে এটি উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য দ্রুত অভিবাসনের পথ তৈরি করছে, অন্যদিকে সাধারণ অভিবাসীদের জন্য প্রচলিত প্রক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির জটিলতার প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মসূচির কার্যকারিতা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অবদান মূল্যায়নে আরও সময় লাগবে।
বর্তমানে আবেদনকারীদের সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা, যাচাইয়ের মানদণ্ড এবং নাগরিকত্বের পথে প্রয়োজনীয় ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা পর্যালোচনা চলছে। প্রশাসন জানিয়েছে, নিরাপত্তা যাচাই ও আর্থিক সক্ষমতা মূল্যায়নের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। গোল্ড কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষতা ও বিনিয়োগনির্ভর অভিবাসনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


