রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের ইচ্ছা, নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকবে

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের ইচ্ছা, নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকবে

জাতীয় ডেস্ক

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর নিজের পদ থেকে সরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সাংবিধানিক কারণে অবিলম্বে পদত্যাগ না করলেও নির্বাচন শেষ হলেই দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার ইচ্ছা তার ব্যক্ত করেছেন তিনি। বঙ্গভবন থেকে চলতি সপ্তাহে দেওয়া এক লিখিত বার্তায় রাষ্ট্রপতি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করতে চান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্বের কারণে বর্তমানে তাকে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির পদ দেশের সাংবিধানিক কাঠামো রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় তিনি এখনই পদত্যাগ করতে পারবেন না। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, গত জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বিশেষভাবে নজরে আসে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতিই ছিলেন সরকারের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ, যিনি পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন।

বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে রাষ্ট্রপতি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর তার নিজস্ব অবস্থান কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচন শেষে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোই উত্তম মনে করছেন।

রাষ্ট্রপতি পদটির সাংবিধানিক কাঠামো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও বাংলাদেশে এই পদ মূলত আলংকারিক। নির্বাহী ক্ষমতার মূল অংশ থাকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার হাতে। তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে—বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন, নির্বাচন ঘোষণা, বা রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায়—রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ২০২৪ সালের মধ্যভাগে উদ্ভূত রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সেই ভূমিকাই সামনে আসে।

মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সাংবিধানিক মেয়াদ অনুসারে তার দায়িত্ব ২০২৮ সাল পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও তিনি আগেই পদত্যাগ করতে চান বলে জানান। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবনির্বাচিত সংসদ গঠন করবে নতুন সরকার। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তার পদ ছাড়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির ঘোষণাটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষতা ও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করেন। তবে রাষ্ট্রপতির আগাম পদত্যাগের ইচ্ছা রাজনৈতিক মহলে নানান আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

এদিকে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থা নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে। নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে রাষ্ট্রপতি দপ্তর, অন্তর্বর্তী সরকার এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নির্বাচন-উত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের গঠন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা নির্ভর করবে নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার ওপর।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন উল্লেখ করেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী রাখাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নির্বাচন-পরবর্তী স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালনের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন আয়োজন এবং সাংবিধানিক দায়িত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা—এসব প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির আগাম বিদায় নেওয়ার ইচ্ছা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে ও পরে রাষ্ট্রপতির অফিস রাজনৈতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ