খেলাধুলা ডেস্ক
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ নকআউট পর্বের ম্যাচে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নেয় ইংলিশ ক্লাবটি। প্রতিযোগিতার অন্যতম শিরোপা দাবিদার দুই দলের লড়াই ফুটবলপ্রেমীদের জন্য প্রত্যাশিত উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেয় সিটি। ম্যাচটির ফল রিয়াল মাদ্রিদের চলতি মৌসুমের পরিকল্পনায় নতুন চাপ তৈরি করেছে এবং কোচ জাবি আলোনসোর ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ম্যাচ শুরুর পরই রিয়াল মাদ্রিদ আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। ইনজুরির কারণে কিলিয়ান এমবাপ্পে শুরুতে মাঠে নামতে না পারায় আক্রমণভাগে পরিবর্তন আনতে হয় দলটিকে। এর মাঝেও গতিশীলতা বজায় রেখে প্রথমার্ধের মধ্যভাগ পর্যন্ত দারুণ কয়েকটি সমন্বিত আক্রমণ গড়ে রিয়াল। ২৮তম মিনিটে সেই চাপের প্রতিফলন পাওয়া যায়। জুড বেলিংহামের লম্বা ক্রস ফাঁকায় তৈরি করা জায়গা থেকে নিখুঁত শটে গোল করেন রোদ্রিগো। মার্চের পর এটি ছিল তার প্রথম গোল, যা দলের মনোবল আরও বাড়িয়ে তোলে।
তবে গোল হজমের পরই প্রতিক্রিয়া দেখায় ম্যানচেস্টার সিটি। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণের নির্ভুলতা এনে সমতায় ফেরে দলটি। ৩৫তম মিনিটে রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়ার ভুলে ফেরত পাওয়া বল কাছাকাছি দূরত্ব থেকে জালে পাঠান তরুণ ডিফেন্ডার নিকো ও’রেইলি। তার এই গোল সিটিকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সহায়তা করে। সমতায় ফেরার পর ম্যাচে তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়।
প্রথমার্ধের শেষদিকে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হয়। বক্সের ভেতরে রিয়ালের রক্ষণভাগের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রুডিগারের ধাক্কায় সিটির আক্রমণ থেমে গেলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ভিডিও সহায়ক রেফারির (ভিএআর) মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হওয়ার পর স্পট কিক নিতে এগিয়ে আসেন আর্লিং হালান্ড। তার নিখুঁত শটে বল জালে জড়ালে সিটি ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধেই ম্যাচ ঘুরে যাওয়ায় দর্শকদের প্রত্যাশা বদলে যায় এবং দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। আক্রমণে লাইন পরিবর্তন করে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন কোচ আলোনসো। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ পেলেও সিটির দৃঢ় রক্ষণভাগ তাদের অগ্রযাত্রা রুখে দাঁড়ায়। মধ্যমাঠে চাপ বৃদ্ধি করেও আক্রমণভাগে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয় রিয়াল। ৬৫তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা এন্ড্রিকের হেডবারে লেগে ফিরে আসে। এর কিছুক্ষণ পর বেলিংহামও বক্সের ভেতর থেকে পাওয়া সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে স্বাগতিক দলটি।
অন্যদিকে লিড ধরে রাখতে কৌশলগত পরিবর্তন আনে ম্যানচেস্টার সিটি। রক্ষণভাগ দৃঢ় করার পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণে গোলের চেষ্টা অব্যাহত রাখে তারা। মিডফিল্ডে পাসিংয়ের ধার বজায় রেখে রিয়ালের প্রেস এড়িয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত রাখে সিটি। ম্যাচের শেষদিকে রিয়ালের বার্নাব্যু দর্শকদের উৎসাহ সত্ত্বেও স্বাগতিকরা কাঙ্ক্ষিত সমতা কিংবা জয়সূচক গোল আদায় করতে পারেনি।
ফলাফল হিসেবে ২-১ গোলের গুরুত্বপূর্ণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যানচেস্টার সিটি। এই জয়ের মাধ্যমে নকআউট পর্বে তাদের অগ্রগতির সম্ভাবনা আরও দৃঢ় হলো। প্রতিযোগিতায় নিয়মিত সাফল্যের কারণে সিটি আবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করল।
অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এই পরাজয় বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে আসে। চলতি মৌসুমে দলটি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে না পারায় কোচ জাবি আলোনসোর কৌশল এবং দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইউরোপসেরা প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে রিয়ালকে পরবর্তী ম্যাচে জয়ের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা সাজাতে হবে। একই সঙ্গে আক্রমণভাগে কার্যকারিতা ও রক্ষণভাগে স্থিতিশীলতা পুনর্গঠনের ওপর জোর দিতে হতে পারে, যা দলের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য জরুরি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী পর্বে উত্তরণ নিশ্চিত করতে দুই দলের সামনে এখনো সমান গুরুত্বপূর্ণ পথ বাকি। দ্বিতীয় লেগে রিয়াল কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, নাকি সিটি নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে—তা নিয়েই ফুটবলপ্রেমীদের নজর থাকবে।


