জাতীয় ডেস্ক
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে সুপারিশ তৈরির লক্ষ্যে গঠিত সরকারি কমিটির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারায় কমিটির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট গঠিত আট সদস্যের এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। গঠনের সময় কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে এক দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় আবারও সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং প্রকৌশলী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। সদস্যদের মধ্যে আছেন শিল্প মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মো. কবির হোসেন এবং বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. প্রকৌশলী তানভির মঞ্জুর সদস্য হিসেবে রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কমিটির দায়িত্ব হলো প্রকৌশল পেশায় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে তাদের যৌক্তিকতা নিরূপণ করা এবং একটি সুসংহত সুপারিশমালা তৈরি করা। বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী এবং ডিপ্লোমাধারী পেশাজীবীদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব, পদোন্নতি কাঠামো, নিয়োগ মানদণ্ড এবং দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে পূর্বে নানা মতভেদ দেখা গেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের উদ্যোগে একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়, যাতে উভয় পক্ষের মতামত যাচাই-বাছাই করে একটি বাস্তবসম্মত কাঠামো প্রণয়ন করা যায়।
কমিটি ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে এবং বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি ও একটি উপকমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত, প্রশাসনিক ও নীতিগত দিকগুলো পর্যালোচনার ক্ষেত্রে এই উপদলগুলো নির্দিষ্ট খাতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দায়িত্ব পালন করছে। সদস্যরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পেশাজীবী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন, যাতে সুপারিশ প্রণয়নে বিস্তৃত মতামত ও তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রকৌশল শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার এই কমিটি গঠন করে। আগস্টের শেষ সপ্তাহে বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা পেশাগত কাঠামো পুনর্বিবেচনা, নিয়োগ নীতিমালা স্পষ্টকরণ এবং পেশাগত স্বীকৃতির বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রারও চেষ্টা করেন, যা দেশের প্রকৌশল খাতে চলমান অসন্তোষের মাত্রা তুলে ধরে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৌশল খাতে পেশাগত কাঠামো সুস্পষ্ট না থাকলে বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নেও প্রভাব পড়তে পারে। সরকারি প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প কারখানা এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগগুলোতে সঠিকভাবে দায়িত্ব বণ্টন ও দক্ষ জনবল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। তাই সরকারের এই উদ্যোগ খাতটির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলে সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ বাস্তবায়ন বা প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রকৌশল পেশার জন্য নতুন কোনো কাঠামো বা নির্দেশনা নির্ধারণের সম্ভাবনাও রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তি খাতে চলমান প্রকল্পগুলোর পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে এই সুপারিশমালা ভবিষ্যতে জনবল ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে পারলে পেশাজীবীদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ নিরসন এবং একটি সমন্বিত পেশাগত ব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হবে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে।


