জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু স্বাধীনকে উদ্ধারের অভিযান টানা ২২ ঘণ্টা ধরে অব্যাহত রয়েছে। গর্তটির সম্ভাব্য গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে স্বাধীন দুর্ঘটনাবশত নলকূপের গর্তে পড়ে যায়। শিশুটির বাবা রাকিব উদ্দীন স্থানীয় বাসিন্দা। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে জানালে দ্রুত উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছে অভিযান শুরু করেন।
ঘটনাস্থলে প্রাথমিকভাবে তিনটি এস্কেভেটর ব্যবহার করে নলকূপের পাশের অংশে খননকাজ শুরু করা হয়। এসব যন্ত্রের সহায়তায় প্রায় ৩০ ফুটের বেশি গভীর গর্ত তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকারী দল সেই গর্ত থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে শিশুটি যে মূল গর্তে পড়ে গেছে, সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করছে। উদ্ধারকারীরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে গর্তে পানি জমে থাকা ও কাদামাটি জমাট বেঁধে থাকার কারণে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নরম মাটিতে ধস নামার ঝুঁকি থাকায় প্রতিটি ধাপেই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ তদারকি করছেন। তিনি বলেন, শিশুটি যে গভীর নলকূপের গর্তে পড়েছে, তার পাশে বড় আকারের একটি খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন সেই খনন করা জায়গা থেকে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে নলকূপের গর্তে প্রবেশের চেষ্টা চলছে। গর্তটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট হওয়ায় শিশুটি ঠিক কোন স্থানে আটকা রয়েছে, তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ফলে উদ্ধারকাজ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।
ঘটনার পর বুধবার রাত পর্যন্ত কয়েক দফা ক্যামেরা পাঠানো হয় নলকূপের ৩০ ফুটের ভেতর পর্যন্ত। তবে ওপর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি, খড় ও অন্যান্য বস্তু ক্যামেরার দৃষ্টিপথ ঢেকে দেওয়ায় শিশুটি ধরা পড়েনি। একই দিনে দুপুরে শিশুটির কান্নার শব্দ পাওয়া গেলেও রাতের দিকে সেই আওয়াজ আর শোনা যায়নি। এ কারণে উদ্ধারকর্মীরা শিশুর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি।
স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। তারা উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এলাকাবাসী জানায়, নলকূপ স্থাপনের জন্য করা গর্তটি কিছুদিন ধরে খোলা অবস্থায় ছিল। শিশু স্বাধীন বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় অসতর্কতাবশত সেখানে পড়ে গেলে পরিবার ও স্থানীয়রা প্রথমে নিজেরা চেষ্টা করলেও গভীরতা বেশি হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়।
উদ্ধার অভিযান দীর্ঘায়িত হওয়ায় শিশুটির পরিবার চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পরিবারটি জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে শিশুটির কোনো শব্দ না শোনা যাওয়ায় তারা দৃষ্টি রাখতে পারছেন শুধু উদ্ধার কার্যক্রমের দিকে। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও উৎকণ্ঠার ছায়া।
উদ্ধারকাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, গভীর ও সরু নলকূপের গর্ত হওয়ায় এতে প্রবেশ বা সরাসরি কাজ করা অত্যন্ত জটিল। যে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে তা ধীরে ধীরে এবং নিরাপত্তা যাচাই করে এগোতে হচ্ছে। বিশেষায়িত উদ্ধার সরঞ্জাম ব্যবহার করা হলেও কাদামাটি ও নরম মাটির স্তর কাজকে উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর করে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গর্তের প্রকৃতি, গভীরতা ও মাটির গঠন বিবেচনায় এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান। সময় দীর্ঘায়িত হওয়ায় শিশুর শারীরিক অবস্থাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযান সফল না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে। এলাকাবাসীকে ভিড় কমিয়ে উদ্ধারকাজে সহায়তা করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শিশু স্বাধীনকে জীবিত উদ্ধারের আশায় পরিবার, উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয়রা অপেক্ষায় রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।


