নিজস্ব প্রতিবেদক
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সম্ভাব্য অপরাধীদের অবস্থান চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সময়ে উদ্ভূত যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি এবং নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার আশঙ্কা বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় অপরাধীরা আত্মগোপন করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্দেহভাজনদের শনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। আলোচনায় বলা হয়, নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা নাশকতার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করতে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে। এ লক্ষ্যে সাধারণ জনগণ যাতে সহজে তথ্য দিতে পারে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পায়, সে জন্য একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই হটলাইন চালু হলে সহিংসতার হুমকি, সন্দেহজনক তৎপরতা বা তাৎক্ষণিক বিপদের তথ্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
জরুরি এই সভায় ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘটনাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে সংঘটিত একটি গুরুতর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন, হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে হামলার পেছনের উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটনে পেশাদার তদন্ত পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, তদন্তে কোনো ধরনের গাফিলতি বা বিলম্ব বরদাশত করা হবে না এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত জনবল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, চেকপোস্ট ও টহল জোরদার এবং বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়ানো গুজব বা উসকানিমূলক তথ্য শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়।
সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সরকারের একাধিক শীর্ষ ব্যক্তি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকার আশা প্রকাশ করে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে এবং আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আয়োজন করা সম্ভব হবে।


