নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিষ্ঠার চার দশক পর প্রথমবারের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গঠনতন্ত্র ও সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন মিললে নির্বাচন আয়োজনের আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও এখানে কখনও কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ ও সংগঠিত মতামত প্রদানের একটি কাঠামো দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিল। বর্তমান উদ্যোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ও শিক্ষার্থী পর্যায়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি প্রয়োজনীয় খসড়া তৈরি করেছে। খসড়াটি ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিসভা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এসব অনুমোদন পাওয়া গেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইন পাসের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, কমিটির পক্ষ থেকে প্রণীত খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে এবং সেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমোদন শেষে খসড়াটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত এলে প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেবে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতেই এই নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রশাসন মনে করছে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রস্তাব কাঠামোবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা সহজ হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্য ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করাই এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়েও প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছে, দীর্ঘদিন পর ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার হবে। তাদের মতে, নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও বিভিন্ন সমস্যা প্রশাসনের কাছে নিয়মিতভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে হলভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলে আবাসন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও কার্যকরভাবে সমাধান করা যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যবেক্ষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিমূলক পরিবেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হবে, যা নীতিনির্ধারণ ও দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সব অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচন আয়োজনের সময়সূচি ও তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন বাস্তবায়িত হলে তা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


