ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো, ঐক্যের অঙ্গীকার

ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো, ঐক্যের অঙ্গীকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও তৎপরতা বেড়েছে। হামলাটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং এর পেছনে সুসংগঠিত শক্তির সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে হামলাকারীদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত এবং তারা প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, এসব তৎপরতার উদ্দেশ্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট পরিবেশকে ভণ্ডুল করা।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক হলেও তা যেন একটি নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পারস্পরিক শত্রুতার সংস্কৃতি থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা জরুরি। তিনি পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান এবং বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সমন্বিত কণ্ঠস্বর গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্যে পারস্পরিক দোষারোপের প্রবণতা বাড়ায় বিরোধী শক্তিগুলো সুযোগ পেয়েছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্বের মতো সমন্বয় ও সংযম বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং দলীয় স্বার্থের বাইরে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা তৈরির চেষ্টা চলছে, যা ভবিষ্যৎ সরকার ব্যবস্থাপনার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, কোনো একটি দল বা শক্তি এককভাবে সরকার পরিচালনা করতে পারবে না; তাই সমন্বিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না। তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে এমন পদক্ষেপ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান, যা সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে জটিল করে তুলতে পারে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তিনি দলীয় স্বার্থের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকের আলোচনায় সার্বিকভাবে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমন্বয় জোরদারের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে। নেতারা বলেন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক ঐক্য ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার কার্যকর প্রয়োগই ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার প্রধান শর্ত।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ