নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাবু বাজার এলাকায় জমেলা টাওয়ার নামে ১২তলা একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আগুন নেভাতে মোট ১২টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল জানায়, ভোর ৫টা ৩৭ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পাওয়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় পরবর্তীতে কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট ও সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে একে একে আরও ইউনিট পাঠানো হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভবনের নিচতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। নিচতলায় আগুন লাগার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো ভবনে ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভবনের ভেতরে অবস্থানকারী লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারণে উপরের তলাগুলোতে অবস্থান করা ব্যক্তিদের নিরাপদে বের করে আনতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, আগুন লাগার সময় ভবনের বিভিন্ন তলায় মানুষ অবস্থান করছিলেন। ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই নিরাপদে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পাশাপাশি ভবনের আশপাশের এলাকাও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে, যাতে আগুন আশপাশের স্থাপনায় ছড়িয়ে না পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তদন্ত শেষে আগুনের উৎস, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ধোঁয়ার কারণে কেউ অসুস্থ হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রয়োজন হলে ঘটনাস্থলে থাকা মেডিকেল টিমের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত রয়েছেন। তারা ভবনের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা এবং উদ্ধার কার্যক্রমে সহযোগিতা করছেন। আগুন নেভানোর কাজে যেন কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে বহুতল ভবনে আগুন লাগলে উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জটিল হয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনায় সময়মতো ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত ইউনিট মোতায়েন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারের ঘটনায় অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। ভবনের ভেতরে কোনো ব্যক্তি আটকা পড়ে আছেন কি না, সে বিষয়েও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অগ্নিনিরাপত্তা বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট ভবন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আগুনের ঘটনায় কোনো ধরনের অবহেলা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় থাকবে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার অগ্রগতি ও পরবর্তী তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্পষ্ট হবে।


