নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ‘জাবালে নূর টাওয়ার’ নামে একটি বহুতল ভবনে লাগা আগুন সাত ঘণ্টা পার হলেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। শনিবার ভোরে শুরু হওয়া এ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মোট ২০টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ভবনের ভেতর আটকে পড়া অন্তত ৪৫ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভোর ৫টা ৩৭ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ৫টা ৪৫ মিনিটে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনসহ আশপাশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে একে একে ইউনিট যুক্ত হয়ে মোট ২০টি ইউনিটে কার্যক্রম বিস্তৃত করা হয়। আগুন লাগার পর থেকেই ভবন এলাকায় ধোঁয়ার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় উদ্ধার ও নেভানোর কাজে বাড়তি সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, জাবালে নূর টাওয়ারটি একাধিক স্বতন্ত্র ভবন নিয়ে গঠিত হলেও এসব ভবনের জন্য একটি অভিন্ন বেজমেন্ট রয়েছে। ভবনটি বাণিজ্যিক ও আবাসিক উভয় ধরনের ব্যবহারের জন্য নির্মিত। নিচতলার প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্যের দোকান এবং ছোট আকারের ঝুট গুদাম রয়েছে। এর ওপরের তলাগুলোতে আবাসিক কোয়ার্টার হিসেবে মানুষ বসবাস করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় নিচতলার অংশে আগুন লাগায় ধোঁয়া দ্রুত ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে ভবনের ভেতরে অবস্থানরতদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, বেজমেন্টে প্রবেশের জন্য মাত্র দুটি পথ রয়েছে। অধিকাংশ দোকান ও গুদামের তালা ও শাটার বন্ধ থাকায় আগুনে পৌঁছাতে গিয়ে তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। পাশাপাশি দাহ্য উপকরণের উপস্থিতি আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনটি ব্রিদিং টেন্ডার ও একটি হ্যাজম্যাট টেন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে দমকল কর্মীরা ঘন ধোঁয়ার মধ্যেও নিরাপদে কাজ চালাতে পারেন।
উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে আটকে পড়া বাসিন্দা ও কর্মচারীদের বের করে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় ভবনের ভেতরে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থেকে এলাকাটি ঘিরে রেখেছেন। আগুন নেভানোর কাজে যাতে কোনো ধরনের বাধা না সৃষ্টি হয় এবং আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বজায় থাকে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবনের আশপাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করা হবে। তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের উৎস, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব নিরূপণ করা হবে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।


