নিজস্ব প্রতিবেদক
গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেদ। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা হাদিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং তার চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে হাদির শারীরিক অবস্থা গুরুতর ছিল। চিকিৎসার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তার অবস্থায় কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, জটিলতা এড়াতে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ সময় আব্দুল্লাহ আল জাবেদ ঘটনার দায় নির্ধারণের বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তার বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
হাদির চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, দেশীয় চিকিৎসার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, হাদির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বা জটিলতা বাড়লে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো উন্নত দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্রিফিংয়ে আরও বক্তব্য দেন ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ফাতেমা তাসনিম ঝুমা। তিনি বলেন, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। ঘটনার পেছনে কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে, তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনার দাবি জানান তিনি। তার মতে, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।
ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। তারা নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তবে এ প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার বা আনুষ্ঠানিকভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করার তথ্য পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন হাদির চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাকে ধীরে ধীরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। অন্যদিকে, অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এই ঘটনার তদন্ত ও হাদির চিকিৎসা অগ্রগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


