চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করল ভারত, কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণতার ইঙ্গিত

চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করল ভারত, কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণতার ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা দেয়নি, তবু উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নতুন ব্যবস্থায় চীনা পেশাজীবীরা চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসায়িক ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাবেন। আগে দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ভিসা পেতে সময় বেশি লাগত। সংশ্লিষ্ট ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে ভিসা ইস্যুর সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারে।

ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণে চাপের মধ্যে ছিল। সীমান্ত ইস্যু, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং বাণিজ্যিক অমিলের প্রভাব পড়েছিল পারস্পরিক যোগাযোগে। এই প্রেক্ষাপটে গত আগস্টে চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রায় সাত বছর পর চীনের মাটিতে গিয়ে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ জোরদারের বিষয়গুলো আলোচনায় আসে।

এই বৈঠকের পর থেকেই নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে যোগাযোগে ধীরে ধীরে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত নভেম্বরে চীনা নাগরিকদের জন্য ভারতের টুরিস্ট ভিসা পুনরায় চালু করা হয়। পর্যটন ভিসা চালুর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার সিদ্ধান্ত সেই ধারাবাহিকতারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে দক্ষ পেশাজীবীর ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, তথ্যপ্রযুক্তি ও উৎপাদন শিল্পে চীনা প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও সরবরাহ শৃঙ্খলের অভাবে এসব খাতে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হলে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর কার্যক্রম দ্রুততর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে এই উদ্যোগ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা যাচাই অব্যাহত থাকবে বলেও তারা উল্লেখ করেছেন।

এদিকে ভারতের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন জানিয়েছেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যোগাযোগ ও বিনিময় অব্যাহত রাখার বিষয়ে বেইজিং আগ্রহী। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক সহজ করার উদ্যোগ উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে। তার ভাষায়, নতুন ভিসা ব্যবস্থা পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং মানুষে-মানুষে যোগাযোগ জোরদারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে কঠোর ভিসা বিধিনিষেধের কারণে ভারতের ইলেকট্রনিকস খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের যন্ত্রাংশ প্রধানত চীন থেকে আমদানি করা হয়। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিবিদ ও সরবরাহকারীদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। নতুন ভিসা ব্যবস্থার ফলে এই খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার সিদ্ধান্ত ভারত-চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার হলে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ