নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে

নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে

জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের জন্য বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা বা এসকর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নির্বিঘ্ন ও নিরাপদভাবে পালনের স্বার্থে এ ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে কমিশন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য একটি গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন সময় বিবেচনায় নিয়ে তার জন্য অতিরিক্ত আরও একটি গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কমিশনের মতে, নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের সময় সিইসির চলাচল, সভা-সমাবেশ এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সংখ্যা বাড়বে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ ছাড়া চিঠিতে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের জন্যও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাদের ঢাকার বাসভবন ও কার্যালয়ে যাতায়াতসহ সব সময় গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দাপ্তরিক কার্যক্রম তদারকি এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এসব শীর্ষ কর্মকর্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখতে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ও কার্যকর ভূমিকা বজায় রাখতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংক্রান্ত পৃথক আরেকটি চিঠিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরের পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় তিন মহানগরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, মহানগর এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই, নির্বাচনী আচরণবিধি তদারকি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় তাদের ওপর চাপ ও ঝুঁকি বাড়তে পারে। সে কারণে আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পাঠানো আরেকটি চিঠিতে দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই চিঠিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অফিসগুলোতে প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। ফলে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচন অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় কমিশনের ওপর আস্থা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থাগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সক্রিয় হয়েছে। শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ