জেলা প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি নাগরিক তসিকুল ইসলামের মরদেহ অবশেষে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জোহরপুর–টেক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মরদেহটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকমল চন্দ্র দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতের পুলিশ মরদেহটি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ হস্তান্তরের আগে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মরদেহ ফেরত সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা ও প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হয়।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মরদেহটি ফেরত আনার সময় তাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে। নিহত তসিকুল ইসলামের ডান কাঁধ থেকে বুকের দিকে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর রাতেই মরদেহটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে বুধবার ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে অবস্থিত ভাগিরথী নদী থেকে তসিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। পরে পরিচয় শনাক্তের পর মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়।
নিহত তসিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী গ্রামের বাসিন্দা এবং ইব্রাহিম আলীর ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, তসিকুল কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে তার মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হলে গুলির ঘটনা ঘটে এবং তিনি নিহত হন। তবে কী পরিস্থিতিতে গুলি চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘটনার পর থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সীমান্তে টহল ও নজরদারি আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান সংক্রান্ত ঘটনায় মাঝেমধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ এড়াতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় আরও জোরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে আইন মেনে চলা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পথে সীমান্ত অতিক্রম থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সচেতন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শোকাহত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতের মরদেহ হস্তান্তরের পর প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। একই সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হয়।


