মবোক্রেসির রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়: আমির খসরু

মবোক্রেসির রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়: আমির খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সহনশীলতার রাজনীতির বিপরীতে দেশে মবোক্রেসির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য প্রত্যাশিত নয়—এমন মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক শর্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনায় ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসমান হাদিকে দেখতে যাওয়ার সময় যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আমির খসরু বলেন, জনগণ এমন রাজনীতি প্রত্যাশা করে না যেখানে বলপ্রয়োগ বা জনতার উত্তেজনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাঁর মতে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই সমাধান হওয়া উচিত। জাতির ভেতরে ঐক্য ও আস্থা তৈরি করতে হলে সব পক্ষকে সংযত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনা সভায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্বকালীন সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উত্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রিজভী বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, যা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেয় না।

অ্যাডভোকেট রিজভী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ওসমান হাদিকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির উদ্দেশে যেসব বার্তা দিচ্ছে, তা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বাইরে গিয়ে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। এসব ঘটনার পেছনে কোনো পরিকল্পিত উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো প্রচেষ্টা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ভিন্নমতকে সম্মান করার মধ্য দিয়েই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। ওসমান হাদিকে সময়ের স্পষ্টভাষী হিসেবে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মত প্রকাশের কারণে কাউকে লক্ষ্যবস্তু করা বা হেনস্তার শিকার করা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।

আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তব্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, আইনের শাসন এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা বলেন, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অটল থাকা জরুরি।

সভায় আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সহিংসতা ও উসকানিমূলক আচরণ পরিহার করে সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। বিএনপির নেতারা দাবি করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি টেকসই হতে পারে না।

বক্তারা মনে করেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে সহনশীলতা ও শালীনতার চর্চা বাড়ানো গেলে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা দেশের সার্বিক স্বার্থেই প্রয়োজন।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ