নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ভিআইপি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ও সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত থাকবে। দিবসটি সামনে রেখে জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ এলাকায় ধোয়ামোছা, রং-তুলির আলপনা, ফুল দিয়ে সাজসজ্জাসহ নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। স্মৃতিসৌধের পাকা অংশের ইটগুলো ঘষে-মেজে খয়েরি ও সাদা রঙে পুনরায় রাঙানো হচ্ছে। একই সঙ্গে লেক সংস্কার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও এলইডি লাইট স্থাপন, ফুলের গাছ রোপণসহ সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুরো এলাকাকে পরিষ্কার ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করা হয়েছে।
জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা এবং স্মৃতিসৌধের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির অংশ হিসেবে ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক আজ শনিবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হয়েছে। এ ছাড়া পোশাকে ও সাদা পোশাকে চার হাজারের বেশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যারা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগত মানুষের জান-মাল রক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে এবং ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ দর্শনার্থীদের উপস্থিতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
তিনি আরও বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বক্ষণ সতর্ক থাকবে এবং দায়িত্ব পালন করবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং প্রবেশপথগুলোতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার খান আনু জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলীসহ লাখো মানুষ স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ উপলক্ষে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, লেক সংস্কার, সিসিটিভি স্থাপন, সৌন্দর্যবর্ধন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বীর শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে গত ৬ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ঢাকার গাবতলী থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে কোনো ধরনের পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় স্মৃতিসৌধের ফুলের বাগান ও অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি না করতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি কার্যক্রমের ফলে মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এবং শহীদদের প্রতি জাতির সম্মান প্রদর্শন আরও মর্যাদাপূর্ণ হবে।


