যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান তারেক রহমানের

যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান তারেক রহমানের

রাজনীতি ডেস্ক

দেশে যেকোনো মূল্যে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ বক্তব্য দেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হলে জাতীয় ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে ষড়যন্ত্র থামবে না, আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ কারণে তিনি যেকোনো মূল্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দেশের কল্যাণে রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিভাজন ও অনৈক্য দেশকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ অবস্থায় জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কার্যকর করতে নির্বাচন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক রহমান সাম্প্রতিক এক সহিংস ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনা তিনি নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, হাদি বর্তমানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সংকটাপন্ন হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ধরনের সহিংস ঘটনার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে কেউ রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে কি না, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

তারেক রহমান এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এসব ঘটনার মধ্যে একটি ধারাবাহিকতা আছে কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। তার বক্তব্যে ইঙ্গিত করা হয়, এ ধরনের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে পারে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারেক রহমান অতীতের শাসনব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অতীতে যেভাবে দেশ পরিচালিত হয়েছে, ভবিষ্যতে বিএনপি সেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায় না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত পরিবর্তন আনতে চায়। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েই বিএনপি ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে এবং নির্বাচিত হলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে তিনি দলের ঘোষিত কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তারেক রহমান বলেন, বিএনপির পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহি, সুশাসন ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনা কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা, তাদের সমস্যার কথা শোনা এবং সে অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করা জরুরি। ঘরে বসে রাজনীতি করলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিএনপির করণীয় সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, দলের প্রতিটি পরিকল্পনা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এখন একটি বড় দায়িত্ব। তিনি বলেন, বিএনপির নেতা ও কর্মীদের উচিত এসব পরিকল্পনা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে সেগুলোর বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। জনগণের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা সফল হতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির মাধ্যমে দল ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায়। এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আরও আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ