জেলা প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের নিচতলায় পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নাইটগার্ডদের দ্রুত তৎপরতায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডে ২০০৮ ও ২০০৯ সালের কিছু ভোটার নিবন্ধন ফরম পুড়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ভোররাতে এক ব্যক্তি দেয়াল টপকে জেলা নির্বাচন অফিস চত্বরে প্রবেশ করে। পরে তিনি নিচতলার স্টোর রুমে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে দায়িত্বরত নাইটগার্ডরা বিষয়টি টের পান এবং তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানোর উদ্যোগ নেন। প্রাথমিকভাবে তাদের প্রচেষ্টাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ফলে ভবনের অন্যান্য অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো গেছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে পুরোনো কিছু ভোটার নিবন্ধন ফরম পুড়ে গেছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ চলমান নথি, আইটি সরঞ্জাম বা অফিসের কাঠামোগত অংশে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, যে স্টোর রুমে আগুন দেওয়া হয় সেখানে মূলত পুরোনো বছরের ভোটার তালিকা ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংরক্ষিত ছিল। পুড়ে যাওয়া ফরমগুলো ২০০৮ ও ২০০৯ সালের হওয়ায় বর্তমান ভোটার তালিকা বা আসন্ন কার্যক্রমে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়বে না বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। তবুও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং নথিপত্রের নিরাপত্তা পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ঘটনার পর লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক এস এম মেহেদী হাসান বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসসহ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় এবং সব সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন সংক্রান্ত দপ্তরগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত, তাই যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার কারণ এবং জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অগ্নিসংযোগের পেছনে কোনো নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি না, কিংবা এটি পরিকল্পিত কোনো কর্মকাণ্ড কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ থাকলে তা পর্যালোচনা করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যৎ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও অফিসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে গুরুত্ব আরোপ করেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নথি ও অবকাঠামো সুরক্ষায় অতিরিক্ত নজরদারি, রাতের নিরাপত্তা জোরদার এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, জেলা নির্বাচন অফিসে নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও এ ঘটনার পর তা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অফিস চত্বরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, প্রাচীর ও আলোকসজ্জা ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা ও দায়ীদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


