আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত অন্তত এক ডজন স্থানে এসব হামলা পরিচালিত হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের একাধিক এলাকা, যেখানে কিছু স্থানে ভারী বোমাবর্ষণের তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় এই হামলা অঞ্চলজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
লেবাননের সরকারি সূত্র জানায়, বিমান হামলার ফলে বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং কিছু এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা গেছে। হামলার মাত্রা ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় এটিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় বিমান অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট সংখ্যা সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলার অংশ হিসেবেই এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে লেবাননের পক্ষ থেকে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। হামলার আগে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈরুতকে আগেই জানানো হয়েছিল যে ইসরায়েল দেশজুড়ে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। এই সতর্কবার্তার পরও হামলা ঠেকাতে কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এতে করে লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। দুই পক্ষের মধ্যে অতীতে একাধিক সামরিক সংঘাত ও সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বছর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেই চুক্তি বারবার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। লেবাননের অভিযোগ, ইসরায়েল নিয়মিতভাবে আকাশসীমা লঙ্ঘন ও সীমান্ত এলাকায় হামলা চালিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে।
এই প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপও বেড়েছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর সামরিক উপস্থিতি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অন্যদিকে লেবাননের রাজনৈতিক বাস্তবতায় হিজবুল্লাহ একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে বিবেচিত, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত।
সাম্প্রতিক বিমান হামলার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। যদিও লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে, তবুও নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। হামলার পর সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। গাজা ও অন্যান্য ফ্রন্টে চলমান উত্তেজনার পাশাপাশি লেবানন সীমান্তে বড় পরিসরের বিমান হামলা আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে যদি পাল্টা প্রতিক্রিয়া বা প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয়, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগের ঘোষণা পাওয়া যায়নি। লেবাননের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে এবং বেসামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এই হামলার ফলে লেবাননের সার্বিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সীমান্ত পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং যে কোনো সময় নতুন সংঘাতের দিকে গড়াতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বাড়ছে।


