নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত হামলাকে তারা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন না। তাঁর মতে, এই হামলা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর আঘাত। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ বক্তব্য দেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পরপরই একজন সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক। তিনি জানান, ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পরদিনই এই হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, হামলার ধরন ও পরিকল্পনা দেখে এটিকে পূর্বপরিকল্পিত ও পেশাদার অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামলায় আহত শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি বর্তমানে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং চিকিৎসা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। একই সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন হামলার পেছনের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই হামলার প্রেক্ষাপটে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে। তিনি জানান, বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক লক্ষ্যে ঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও মতবিরোধ থাকবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক অংশ। তবে এসব বিতর্ক যেন এমন পর্যায়ে না পৌঁছায়, যাতে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়—সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। তাঁর মতে, জুলাই ২০২৪ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত জনআকাঙ্ক্ষা, গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা এবং পরিবর্তনের চেতনা সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা প্রয়োজন।
নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে, যারা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এসব শক্তির একটি অংশ দেশের ভেতরে এবং একটি অংশ দেশের বাইরে অবস্থান করছে। তারা নির্বাচনকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ হিসেবে স্বীকার করতে চায় না এবং একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করে। হামলার মতো ঘটনাগুলো সেই অপচেষ্টারই বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর মতে, এ ধরনের হামলা রাজনৈতিক ঐক্যকে আরও দৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব অপচেষ্টা মোকাবিলা করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখাই বর্তমান সময়ের প্রধান দায়িত্ব। তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা, রাজনৈতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিশ্চিত করাই রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। হামলা, সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


