নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সহায়তাকারীকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ীদের ধরিয়ে দিতে পারলে সরকারিভাবে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে এবং সন্দেহভাজনদের শনাক্তে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই চলছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আসামি ধরার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং সব পক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার আশা করা হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির বৈঠকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন নিরাপত্তা ইস্যু, নির্বাচনী পরিবেশ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুরক্ষার বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
হত্যাচেষ্টার শিকার শরিফ ওসমান হাদির বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জানানো না হলেও, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার সুস্থতা কামনার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
বৈঠক পরবর্তী বক্তব্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এর অংশ হিসেবে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, অতীতে মূলত সরকারি কর্মচারীদের অস্ত্র বহনের লাইসেন্স দেওয়া হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে বলে আবেদন করবেন, তাদের ক্ষেত্রেও আইন অনুযায়ী লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। একই সঙ্গে কারও বৈধ অস্ত্র যদি প্রশাসনের কাছে জমা থাকে, তবে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সম্মুখসারিতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গেও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ওই সময় যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাম্প্রতিক অপরাধ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর ঘটনায় পুরস্কার ঘোষণা তদন্তে গতি আনতে সহায়ক হতে পারে এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। একই সঙ্গে নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না এবং সহিংসতা, সন্ত্রাস বা হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।


