নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমন্বিত নিরাপত্তা প্রটোকল প্রণয়ন ও সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এই প্রটোকলের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সম্ভাব্য প্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো তাদের বাসস্থান, দলীয় কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সমাবেশ, পাশাপাশি অনলাইন ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
রোববার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক পোস্টে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা, জনসভা, মিছিল এবং অনলাইন প্রচার কার্যক্রমে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে এই প্রটোকল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পোস্টে আরও জানানো হয়, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারীর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, চলাচল এবং কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের নজরদারি ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, হামলায় জড়িত মূল সন্দেহভাজন ও তার সহযোগীদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তদন্তের অংশ হিসেবে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজনদের অবস্থান দেশের অভ্যন্তরে একাধিকবার শনাক্ত করা হলেও তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করায় এখনো গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি।
পুলিশ আরও জানায়, প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য গত শুক্রবার রাতেই দেশের সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে তার ছবি ও পরিচয়সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজনদের সম্ভাব্য পলায়ন পথগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রধান সন্দেহভাজন নিজেকে আইটি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ জুলাই তার সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এই ভ্রমণ ইতিহাস যাচাই করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার আর্থিক লেনদেন ও যোগাযোগের পরিধিও খতিয়ে দেখছে। হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে—এমন আরও কয়েকজনকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়েও তৎপরতা চালানো হচ্ছে। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৈঠকে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত পলাতক এসব ব্যক্তির কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে অনুরোধ জানায়, যাতে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বার্থে সহযোগিতা জোরদার করে। একই সঙ্গে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনরা যদি ভারতে পালানোর চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে তাদের আটক করে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা—এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।


