একই দিনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬

একই দিনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত গণভোটের সময়সূচি, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও ভোটদানের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিপত্র অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে, একই সময়ে এবং একই ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।

শনিবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে গণভোটের উদ্দেশ্য, প্রশ্ন, ভোটার তালিকা, কর্মকর্তা নিয়োগ, ব্যালট ও ব্যালট বাক্স, পোস্টাল ভোট এবং ভোট গণনার বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার আলোকে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের বিষয়ে জনগণের সম্মতি যাচাইয়ের জন্য সরকার গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫ ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে।

পরিপত্র অনুযায়ী, গণভোটে একটি সামগ্রিক প্রশ্নে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রশ্নটি হলো—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাবের প্রতি ভোটারদের সম্মতি আছে কি না। ভোটাররা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট প্রদান করবেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রক্রিয়া; দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু করা এবং দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠন; সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমোদনের বিধান; সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি; বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন; মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ মোট ৩০টি বিষয়ে গৃহীত ঐকমত্য বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা।

ইসি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে, তারাই নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে গণভোট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। একইভাবে, সংসদ নির্বাচনের জন্য নিযুক্ত প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা গণভোটের দায়িত্বও একযোগে পালন করবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা একই সময়ে ও একই কেন্দ্রে উভয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটার তালিকার ক্ষেত্রেও অভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোই গণভোটের জন্য ব্যবহৃত হবে। একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ভোটার তালিকাই গণভোটের ভোটার তালিকা হিসেবে গণ্য হবে। তালিকাভুক্ত প্রত্যেক ভোটার সংসদ নির্বাচন ও গণভোট—উভয় ক্ষেত্রেই ভোট প্রদানের অধিকার পাবেন।

ব্যালট ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন রঙের ব্যালট ব্যবহার করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য গোলাপি রঙের আলাদা ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে। তবে উভয় ব্যালট একই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে জমা দিতে হবে। ভোটার ব্যালট গ্রহণের পর নির্ধারিত গোপন কক্ষে গিয়ে গণভোটের প্রশ্নে হ্যাঁ বা না-সূচক ঘরে সিল দিয়ে ভোট প্রদান করবেন এবং ভাঁজ করে সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সঙ্গে একই বাক্সে ফেলবেন।

বিদেশে অবস্থানরত ও নির্দিষ্ট শ্রেণির ভোটারদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থাও বহাল থাকবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী যাঁরা সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার যোগ্য, তাঁরা একই পদ্ধতিতে গণভোটেও ভোট প্রদান করবেন। এ ক্ষেত্রে গণভোটের জন্য নির্ধারিত পোস্টাল ব্যালট ফরম ব্যবহার করতে হবে এবং হ্যাঁ বা না-এর পাশে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে মত প্রকাশ করতে হবে।

ভোটগ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্র বা পোস্টাল ভোট গণনা কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্স খুলবেন। এরপর সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট আলাদা করে গণনা করা হবে। গণভোটের ক্ষেত্রে হ্যাঁ ও না-সূচক ব্যালট পৃথকভাবে গণনা করে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে। ইসি আশা করছে, নির্ধারিত নির্দেশনা অনুসরণ করে একই দিনে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ