নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার মালিকানাধীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। রোববার এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, সন্দেহভাজনের আর্থিক লেনদেন, আয়-ব্যয়ের উৎস এবং সম্ভাব্য অবৈধ অর্থপ্রবাহ যাচাইয়ের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ফয়সাল করিম মাসুদের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত।
ফয়সাল করিম মাসুদের মালিকানাধীন ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন আইটি সেবার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তার মালিকানাধীন আরেকটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করা হয়েছিল, যা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের একটি প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি পায়।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলে থাকা এক ব্যক্তি তাকে গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমান হাদিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকদের মতে, তার অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওসমান হাদির সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ফয়সাল করিম মাসুদের উপস্থিতির ছবি ও তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ছবিতে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে হামলায় জড়িত মোটরসাইকেল আরোহীর শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য থাকায় তদন্তে তার নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব আলামত যাচাই করে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি জোরদার করেছে এবং সম্ভাব্য রুট ও সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে।
ফয়সাল করিম মাসুদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্যও তদন্তে বিবেচনায় রয়েছে। তিনি অতীতে কার্যক্রমনিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৯ সালে ঘোষিত ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–১২ আসনে গঠিত একটি আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটিতেও তার সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নথি অনুযায়ী, ফয়সাল করিম মাসুদের বিরুদ্ধে অতীতেও একটি গুরুতর ফৌজদারি মামলা ছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাজধানীর আদাবর এলাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে অস্ত্রের মুখে অর্থ লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনি প্রধান আসামি ছিলেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন লাভ করেন এবং সর্বশেষ গত আগস্টে তার জামিনের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়।
জামিনে থাকা অবস্থায় ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় তার নাম উঠে আসায় বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আর্থিক তদন্ত, অপরাধের সম্ভাব্য মোটিভ এবং পূর্ববর্তী মামলার ধারাবাহিকতা বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিতভাবে তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


