আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, গাজা সিটিতে চালানো একটি লক্ষ্যভিত্তিক হামলায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদ নিহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চিতকরণ দেয়নি। হামলার ঘটনা ও সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো ঘিরে গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সংঘটিত ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। হামলাটি গাজা সিটির একটি এলাকায় সংঘটিত হয়, যেখানে একটি বেসামরিক গাড়িকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে।
হামাসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, তারা রায়েদ সাদের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, গাজা সিটির বাইরে একটি বেসামরিক যান লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। হামাসের মতে, গত অক্টোবরে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী এ ধরনের সামরিক অভিযান নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রায়েদ সাদ হামাসের সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং গোষ্ঠীর অস্ত্র উৎপাদন ও সংগঠনিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সংঘটিত হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই অভিযানে সাদই মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। তাদের দাবি, তিনি হামাসের অস্ত্র উৎপাদনকারী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং গাজায় গোষ্ঠীর সামরিক কাঠামো পুনর্গঠনে সক্রিয় ছিলেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, এসব কর্মকাণ্ড তাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করছিল।
হামাস-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রায়েদ সাদকে গোষ্ঠীর সশস্ত্র শাখার অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ইজ আল-দিন আল-হাদ্দাদের পর হামাসের সশস্ত্র শাখার দ্বিতীয় শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি হামাসের গাজা সিটি ব্যাটালিয়নের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন, যা গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বড় ও সুসজ্জিত ইউনিটগুলোর একটি বলে পরিচিত।
যদি ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী রায়েদ সাদ নিহত হয়ে থাকেন, তবে এটি চলতি বছরের অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাসের সিনিয়র নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন একটি ঘটনা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।
গাজায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম সংঘর্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও বিচ্ছিন্ন হামলা ও পাল্টা অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রায়েদ সাদকে লক্ষ্য করে চালানো হামলার দাবি ও তার প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল ইতোমধ্যে বেসামরিক হতাহতের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হামাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অবস্থান স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রায়েদ সাদের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। তবে এই ঘটনার ফলে গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।


