গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই, মস্তিষ্কের অবস্থা গুরুতর

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই, মস্তিষ্কের অবস্থা গুরুতর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থায় এখনো কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। সর্বশেষ চিকিৎসা মূল্যায়ন অনুযায়ী, তার মস্তিষ্কের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্লিনিক্যাল অবস্থার দিক থেকে তিনি আগের মতোই সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন এবং জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রের সহায়তায় চিকিৎসা চলছে। এ অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সম্ভাবনাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মেডিকেল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে এক চিকিৎসক এ তথ্য জানান। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অংশ নেন। বৈঠকে রোগীর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা, পরীক্ষার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকের আগেই ওসমান হাদির একটি পুনরায় সিটি স্ক্যান করা হয়। ওই সিটি স্ক্যানে তার মস্তিষ্কে ব্যাপক ইডেমা বা পানি জমার লক্ষণ ধরা পড়েছে। পাশাপাশি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ব্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ছিটা ছিটা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও দেখা গেছে। চিকিৎসকদের মতে, সর্বশেষ সিটি স্ক্যানের ফলাফল অনুযায়ী তার মস্তিষ্কের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির ফুসফুসের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে এবং এতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালু রাখতে তাকে এখনো লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়া তার শ্বাসপ্রশ্বাস সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

তবে কিছুটা স্বস্তির বিষয় হিসেবে চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেন, তার কিডনির কার্যকারিতা এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় চার লিটার ইউরিন আউটপুটের ভিত্তিতে তার শরীরের ফ্লুইড ব্যালেন্স বজায় রাখা হচ্ছে। এই দিকটি চিকিৎসার জন্য ইতিবাচক হলেও সামগ্রিক অবস্থার তুলনায় তা খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত।

এর আগে ওসমান হাদির শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতার কারণে ডিসিমিনেটেড ইনট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (ডিআইসি) নামক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ওই অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। তবে নতুন করে এ সংক্রান্ত কোনো অতিরিক্ত সংকট তৈরি হয়নি বলে মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে।

চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা এখনো তার মস্তিষ্কের অবস্থা। বিশেষ করে ব্রেন স্টেম ইনজুরি এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। ব্রেন স্টেম মানবদেহের শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদস্পন্দনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এ অংশের আঘাত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া চিকিৎসকেরা আরও উদ্বেগজনক একটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন। যে পাশ দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, তার বিপরীত পাশ দিয়ে মস্তিষ্ক সামান্য বাইরে দিকে চাপ দিচ্ছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অবস্থা নিউরোসার্জারির দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত জটিল এবং তা রোগীর অবস্থাকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলছে বলে তারা জানান।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বোর্ডের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি বিস্তারিত কেস সামারি প্রস্তুত করা হয়েছে। বিদেশের কোনো হাসপাতাল ওই কেস সামারি পর্যালোচনা করে রোগীকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণে সম্মত হলে তবেই বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্তভাবে বিবেচনা করা হবে।

চিকিৎসকেরা জানান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশের হাসপাতাল—কোথায় নেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। একই সঙ্গে রোগীকে বিদেশে স্থানান্তরের মতো শারীরিক স্থিতিশীলতা রয়েছে কি না, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ