থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্ত ক্রসিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল কম্বোডিয়া

থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্ত ক্রসিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল কম্বোডিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে টানা উত্তেজনা ও সশস্ত্র সংঘর্ষ চলতে থাকায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব ধরনের সীমান্ত ক্রসিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কম্বোডিয়া। শনিবার দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রবেশ ও বহির্গমন কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রয়্যাল গভর্নমেন্ট অব কম্বোডিয়া অবিলম্বে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এবং চলমান সংঘর্ষের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে গোলাগুলি ও সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। সর্বশেষ উত্তেজনার জেরে সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং বেসামরিক চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে সীমান্ত বাণিজ্য, পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতির ওপর।

এর আগে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘর্ষ বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন বলে ইঙ্গিত মিলছে। সীমান্তে লড়াই অব্যাহত রয়েছে এবং উভয় দেশই সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে। কম্বোডিয়ার সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্তকে চলমান উত্তেজনারই প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল জানিয়েছেন, কম্বোডিয়া থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকি পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত তার দেশ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর নেই এবং পরিস্থিতি এখনো সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি। থাইল্যান্ড তার ভূখণ্ড ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।

আনুতিন চার্নভিরাকুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, থাইল্যান্ডের ভূমি ও জনগণের প্রতি যেকোনো ধরনের হুমকি দূর না হওয়া পর্যন্ত সামরিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, হামলা বন্ধ করার উদ্যোগ প্রথমে কম্বোডিয়ার দিক থেকেই আসা উচিত। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থাইল্যান্ডের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়।

তবে একই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলে আলোচনা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই যোগাযোগ ভবিষ্যতে উত্তেজনা প্রশমনের পথ তৈরি করতে পারে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সমাধানের সম্ভাবনা সীমিত।

সীমান্ত বন্ধের ফলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থলবন্দরনির্ভর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই উত্তেজনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামগ্রিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আসিয়ানভুক্ত দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকলে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করার প্রয়োজন দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা কিংবা বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা হতে পারে।

বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে উভয় দেশ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করেই ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক