নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার সংকটে পড়লেও তা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় বিএনপি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতন্ত্রের চর্চা এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
নজরুল ইসলাম খান তার বক্তব্যে বলেন, দেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গণতন্ত্রকে বারবার দমন করার চেষ্টা করা হলেও বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান ধারাবাহিক এবং এ বিষয়ে দলটি অতীতেও ভূমিকা রেখেছে।
আলোচনা সভায় তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলেন, যারা গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন, তারা বিভিন্নভাবে বাধার মুখে পড়ছেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার রক্ষায় যারা সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এসব ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ দিবস থেকে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভায় বিএনপির এই নেতা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি শিক্ষা, চিকিৎসা ও সাংবাদিকতা খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব ক্ষেত্রে পেশাজীবী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার রয়েছে। তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সকল রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড পরিহার করা জরুরি। যারা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে বলে বিএনপি মনে করে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত বক্তারা শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আলোচনায় বক্তারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে মুক্তচিন্তা, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এসব মূল্যবোধকে নতুন করে স্মরণ করার একটি উপলক্ষ।
অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেন। সভা শেষে আয়োজকেরা জানান, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ভবিষ্যতেও এ ধরনের আলোচনা সভা ও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।


