শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার ভোর থেকে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ এলাকাজুড়ে ছিল শোক ও শ্রদ্ধার আবহ।

সকাল ৭টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সর্বপ্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীতে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়।

এরপর সকাল সোয়া ৭টার কিছু পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে সালাম জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরাও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই স্মৃতিসৌধে ভিড় জমাতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেককে নীরবে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে এবং স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পটভূমিতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম ইতিহাস নতুন করে স্মরণ করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে ওই রাতে ঘাতক চক্র পরিকল্পিতভাবে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। সান্ধ্য আইন জারির সুযোগ নিয়ে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘর থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই রাতে প্রায় দেড়শ’ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। পরদিন সকালে মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল, অনেককে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মেধা ও নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করা।

প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এ দিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং সরকারি-বেসরকারি ভবনে শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সামাজিক উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর শোকের দিন হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ত্যাগ ও মূল্যবোধ স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশ গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে।

জাতীয়