নিজস্ব প্রতিবেদক
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নতুন করে হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে এবং সামনে আরও সহিংস ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শনিবার সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে যেভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রত্যাশা করছে এবং এই প্রত্যাশার পথেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আবারও একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তিনি জানান, রাজনৈতিক মতভেদ থাকা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করে। সকাল থেকেই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষক, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, ১৪ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী পরিকল্পিতভাবে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, লেখকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে মেধাশূন্য করা। ইতিহাসে এই দিনটি জাতির জন্য এক গভীর বেদনাবিধুর অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, স্মরণসভা এবং বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়, যেখানে বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান স্মরণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মতো জাতীয় স্মরণীয় দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যে সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এসব বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে। তবে দিবসটির মূল তাৎপর্য হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করা এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগ স্মরণ করা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদানের সঙ্গে পরিচিত করানোই মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যবোধে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।


