সিরিয়ায় আইএসআইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও এক বেসামরিক দোভাষী নিহত

সিরিয়ায় আইএসআইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও এক বেসামরিক দোভাষী নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস)–এর এক বন্দুকধারীর অতর্কিত হামলায় দুইজন মার্কিন সেনা ও একজন মার্কিন বেসামরিক দোভাষী নিহত হয়েছেন। একই হামলায় আরও তিনজন মার্কিন সেনা আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হামলাকারী বন্দুকধারী নিহত হন বলে জানানো হয়েছে।

সেন্টকমের বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার সিরিয়ার পালমিরা শহরের কাছে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় মার্কিন সেনারা স্থানীয় এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন। বৈঠক চলাকালে এক ব্যক্তি অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় এবং গোলাগুলির এক পর্যায়ে হামলাকারী নিহত হয়।

নিহতদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সেন্টকম জানিয়েছে, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অবহিত না করা পর্যন্ত অন্তত ২৪ ঘণ্টা তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। আহত তিনজন মার্কিন সেনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তারা শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

সেন্টকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় জানায়, এটি ছিল একজন একক আইএসআইএস বন্দুকধারীর পরিকল্পিত হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা প্রাথমিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে জানান, হামলার ধরন ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এটি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর হামলা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে এ ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত আইএসআইএসের হামলা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। একই সঙ্গে আহত সেনাদের সুস্থতার বিষয়েও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সিরিয়ার সরকার এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের হামলা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল জানান, হামলাটি এমন একটি এলাকায় সংঘটিত হয়েছে, যা সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিনি বলেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য সহযোগীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করেছে, হামলাকারী ব্যক্তি সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তবে এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সিরিয়ায় এখনো সীমিত সংখ্যক মার্কিন সেনা অবস্থান করছে, যাদের মূল লক্ষ্য ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান ঠেকানো এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএসআইএসের সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই দুর্বল হলেও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হামলা চালানোর সক্ষমতা তারা বজায় রেখেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ হামলা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের ঝুঁকির বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জটিলতা এবং বিভিন্ন পক্ষের নিয়ন্ত্রণহীন এলাকায় সহিংসতার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। হামলার তদন্তের অগ্রগতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দিকে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে।

আন্তর্জাতিক