আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন একটি লজিস্টিক ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল আনুমানিক ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কাদুগলি লজিস্টিক বেসে এ হামলা ঘটে। রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে হতাহতদের পরিচয় প্রকাশ করে এবং ঘটনার বিস্তারিত জানায়।
আইএসপিআর জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। হামলায় দায়িত্বে থাকা ছয়জন সদস্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং আটজন গুরুতর আহত হন। নিহত ও আহত সবাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষা কন্টিনজেন্টের সদস্য।
নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা, এএসসি, যিনি নাটোর জেলার বাসিন্দা; সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম, বীর, কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা; সৈনিক শামীম রেজা, বীর, রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা; সৈনিক শান্ত মন্ডল, বীর, গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম; মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা; এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া, যিনি গাইবান্ধা জেলা থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান, পিএসসি, অর্ডিন্যান্স শাখার কর্মকর্তা, কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা; সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, বীর, দিনাজপুর; কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি, সিগন্যালস, ঢাকা; ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম, ইএমই, বরগুনা; সৈনিক মো. মেজবাউল কবির, বীর, কুড়িগ্রাম; সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা, রংপুর; সৈনিক চুমকি আক্তার, অর্ডন্যান্স, মানিকগঞ্জ; এবং সৈনিক মো. মানাজির আহসান, বীর, নোয়াখালী।
আইএসপিআর জানায়, আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অন্যান্য আহত সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তারা সবাই বর্তমানে শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিয়োজিত নিরস্ত্র শান্তিরক্ষীদের ওপর এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ হামলা শুধু শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেও ব্যাহত করে।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, শহিদ শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার ও অবদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ধরনের হামলা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
নিহত শান্তিরক্ষীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় কর্মরত বাংলাদেশি সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদারের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।


