নিজস্ব প্রতিবেদক
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে থেকে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এই মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ডাকসু ভবন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসি হয়ে সচিবালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন। আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি তাদের দাবিগুলো সরাসরি তুলে ধরতেই এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ডাকসু সূত্র জানায়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত গুলিবর্ষণের ঘটনাকে তারা গুরুতর নিরাপত্তা সংকট হিসেবে দেখছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়।
মিছিল চলাকালে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসব স্লোগানে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ, বিচার দাবি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান ফুটে ওঠে। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি উপস্থাপনের কথা জানালেও, নিরাপত্তা ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিছিলের সার্বিক পরিবেশে প্রতিবাদী মনোভাব লক্ষ্য করা যায়, তবে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, ডাকসুর সামনে থেকে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে টিএসসি হয়ে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরের কাছে গিয়ে তিন দফা দাবি লিখিত ও মৌখিকভাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথাও জানান তিনি।
ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর এ ধরনের হামলা রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কাকে নতুন করে সামনে এনেছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সচিবালয় এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই কর্মসূচিও সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে শিক্ষার্থীরা সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে প্রশাসনিক উদ্যোগ জোরদার করার চাপ বাড়তে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগ ও দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিছিলটি টিএসসি এলাকা অতিক্রম করে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে আয়োজক ও প্রশাসন উভয় পক্ষই জানিয়েছে।


