নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতারা। এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি তোলা হবে বলে জানান তারা। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম।
সাদিক কায়েম বলেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে এবং তদন্তে যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
ডাকসু ভিপি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে তদন্ত কার্যক্রম স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করে দ্রুত অগ্রগতি দৃশ্যমান করা জরুরি। তিনি জানান, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না এলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ আরও বাড়বে।
ডাকসু নেতাদের দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক অভিযান শুরু করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে সরকারের শৈথিল্য বা বিলম্ব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও কার্যকর অভিযান না থাকলে সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ে। তাই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সমন্বিত অভিযান শুরু করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এসব অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে জনসম্মুখে তথ্য জানানো হলে আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডাকসু ভিপি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত রায় কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
সাদিক কায়েমের ভাষ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইন ও বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে প্রত্যর্পণ ইস্যুতে সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত।
ডাকসু নেতারা জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে তারা এসব দাবি লিখিত ও মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়গুলো শুনেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তারা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দেন ডাকসু নেতারা।
উল্লেখ্য, ওসমান হাদির ওপর হামলার পর তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি ওঠে। সামগ্রিকভাবে ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা নীতিনির্ধারকদের জন্য তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।


