জেলা প্রতিনিধি
খুলনার রূপসা সেতুর পূর্বপাড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে সাগর (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্ব পাশে জাবুসা ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাগর গ্রিন বাংলা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা ফায়েক শেখের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সাগর নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় রূপসা সেতুর পূর্বপাড়ে পৌঁছালে কয়েকজন যুবক তার পথ রোধ করে। কোনো ধরনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা সাগরের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলির মধ্যে একটি তার মাথায় এবং আরেকটি হাঁটুতে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন।
গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সময় এলাকায় লোকজন চলাচল করছিল। প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।
রূপসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মীর জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তিনি বলেন, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এর পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে।
পুলিশ জানায়, নিহত সাগরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এবং তার পূর্বের চলাফেরা, ব্যক্তিগত বিরোধ বা কোনো অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপসা সেতু সংলগ্ন এলাকায় রাতে যানবাহন ও মানুষের চলাচল স্বাভাবিক থাকে। এমন একটি ব্যস্ত এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এলাকাবাসী দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার এবং জড়িতদের শনাক্ত করতে বিশেষ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হচ্ছে এবং একাধিক সম্ভাব্য দিক থেকে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো পূর্বশত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার বা অন্যান্য অপরাধমূলক বিরোধ জড়িত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের দাবি, সাগর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং তার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশি নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


