নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরুতর আহত হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাতায়াত, হাসপাতাল ব্যয় এবং আনুষঙ্গিক সব খরচ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বর্তমানে সন্তোষজনক রয়েছে এবং এটি আরও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্বের অংশ এবং সেই দায়িত্ব থেকেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার দুপুরে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। চিকিৎসক দল, প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সরঞ্জাম এবং ভ্রমণসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রেস উইং জানায়, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে বলে প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহত ব্যক্তির চিকিৎসায় কোনো ধরনের ঘাটতি যাতে না থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলে করে আসা দুই ব্যক্তির একজন চলন্ত একটি রিকশায় থাকা শরীফ ওসমান বিন হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। হামলার পরপরই তিনি গুরুতর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
চিকিৎসকরা জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে তার অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে এবং উন্নত চিকিৎসা ও বিশেষায়িত সেবা প্রয়োজন। এ কারণে বিদেশে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা কার্যক্রমের অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সহিংসতার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংস ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


