নিজস্ব প্রতিবেদক
উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে শরিফ ওসমান হাদিকে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করানো হয়। তাকে বহনের জন্য ব্যবহৃত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি একই দিন বেলা ১১টা ২২ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার আকাশসীমা ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই শরিফ ওসমান হাদি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আঘাতের জটিলতা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের সমন্বিত পরামর্শে গৃহীত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পরপরই তাকে উদ্ধার করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, তার শরীরে একাধিক আঘাত রয়েছে এবং চিকিৎসার শুরু থেকেই তার অবস্থা নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এ ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের সমমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম, অক্সিজেন সাপোর্ট, মনিটরিং ব্যবস্থা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত থাকেন। যাত্রাপথে রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা এবং জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা থাকায় ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। শরিফ ওসমান হাদির ক্ষেত্রেও এই ধরনের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকেও গুরুত্ব পেয়েছে। পল্টন এলাকা রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। সেখানে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার প্রকৃত কারণ, হামলাকারীদের পরিচয় এবং ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট উদঘাটনে তদন্ত চলছে। এই প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে শরিফ ওসমান হাদি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। একই সঙ্গে ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ায় তার ওপর হামলার ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। এ ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা, জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা গুরুত্ব পাচ্ছে।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর শরিফ ওসমান হাদিকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। চিকিৎসার অগ্রগতি, সুস্থতার অবস্থা এবং দেশে ফেরার সময়সূচি চিকিৎসকদের মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করবে।
এই ঘটনার পরবর্তী অগ্রগতি, চিকিৎসা পরিস্থিতি এবং তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসা দলের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।